Monday, November 7, 2011

মাহবুব কবিরের কবিতার দিকে তাকিয়ে সুমিত গদ্যকলাপ

জানা গেল তাদের বাড়ির পথ মোটামুটি হেঁটে যাওয়া যায়... মাহবুব কবির হেঁটে যাচ্ছে। এলানো চুলে দুএকটা পাকা টান দ্যুতি ছড়াচ্ছে।... মাহবুব বাণিজ্য করে... থলেটা আকস্মিক ফিরে আসে, খাতাপত্র তামাকপল্লব থেকে মাহবুব উঁকি মারে।... রৌদ্রে বর্ণক্ষেপণ-করা-মাহবুবকে মেনে নেয়া দরকার... হাওড়ের এত লোক থাকতে তুই কীভাবে উদঘাটন করলি : সমুদ্রের সবচেয়ে ছোট মেয়ে এই হাওড়!... এইসব মাহবুব নিয়ে। চোখ আজো সঙ্গ দিচ্ছে তাকে।... অভিজ্ঞতা ও বন্ধুসূত্রে সবিশেষ উল্লেখ্য, মাহবুব কবিরের পাশে কেউ কোনোদিন মেয়ে দেখে নি।... আমরা শহরের সীমিত রাস্তায় সেইমত নারী খুঁজে ফিরি, যাকে মাহবুব কবিরের পাশে কল্পনা করা যায়।
(জাফর আহমদ রাশেদ, মাহবুব কবির সম্পর্কে বিশেষত তরুণীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে..., নন্দন, ষষ্ঠ সংখ্যা)
বিবিধ দূষণ, ক্রূরতা-বক্রতা, নগরাধিবাসীদের তীর্যক বাক্যবাণ, পারস্পরিক অবিশ্বস্ততা, সন্দেহ যখন দারুণভাবে ক্লান্ত-শ্রান্ত করে তুলছে, যখন শ্বাসকষ্ট গেড়ে বসছে ফুসফুসে-মনে, বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই যখন খুঁজছি গ্রামকে হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে-দেয়া-যায় ধরনের ছোট শহরের আবডাল, তখন অন্তর্গত প্ররোচনাবশত আরো একবার মাহবুব কবিরের কবিতার শুশ্রূষা নিতে গিয়ে শৈশব-কৈশোরকে স্পর্শ করতে পারার আনন্দে যেন নতুনভাবে বেঁচে উঠছিলাম আমি। জানি, ওটি দুধের স্বাদ নিছক ঘোলে মেটানো, তথাপি কবিতার এ মনোসামাজিক গুরুত্বকে নিজের মতো করে উপলব্ধিতে আনতে পেরে ভিতরোৎসারিত অন্যরকম এক আহ্লাদবোধ আমাকে তাড়িত করছিল। সেটি বছর আটেক আগের কথা। তখন এই ঘোরটিকে আবিষ্কারের একটা ইচ্ছে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উপলব্ধি করি। মাত্র কৈ ও মেঘের কবিতাসমৃদ্ধ আমার ভাণ্ড সমৃদ্ধ করি কবিবন্ধু অলকা নন্দিতার সংগ্রহ থেকে ধূলির বল্কল ধার করে এনে। তখনকার ওই ভালোমন্দ লাগাগুলোর দুয়েকটা সূত্রকথার ভার কী-বোর্ডে আঘাতও করেছিল। কিন্তু কথাগুলোর লিখিতরূপ একটি আধাপূর্ণ অবয়বে এসে থেমে যায়। সাহিত্যদর্শনজাত একটি বৈপরীত্য আমাকে শাসায়, আর ফলে ঘোরটি অন্যদিকে মোড় নিয়ে নেয়। ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য হাজারো কাজে।

ব্যাপার এমন হয় যে, মাহবুব কবিরকে আমরা প্রত্যক্ষত কম দেখতে থাকি, এমনকি ওর কবিতাকেও। কবিতার জন্যে ওত পেতে থাকা ওর স্বভাবেও খানিক পরিবর্তন আসে। একা হলেই জীবন ওকে বেশ ধমকাতে শুরু করে। এই ধমকের ভয়েই ও সংসারী হবার দিকে তাকায়। আর সংসারের যে ভার তা বইবার প্রয়োজনেই ওকে গলা বাড়িয়ে দিতে হয় পরাধীনতার দিকে। বিষাক্ত সাপ যেমন মাথার মণিকে নিরাপদ স্থানে রেখে খাদ্যাহরণে যায়, তেমনি ও কবিতার ঘোরকে ব্যাগে অথবা অন্য কোথাও রেখে পত্রিকা অফিসে যাতায়াত শুরু করে। স্বর্ণালী পর্বটি ওর সমাপ্ত হয়ে যায়।

২০০৫-এ আমাকে হাওর বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তৈরির দায়িত্ব নিতে হয়। এ বিষয়ক সংশ্লিষ্ট, আধাসংশ্লিষ্ট, ঊনসংশ্লিষ্ট সব সেকেন্ডারি ইনফরমেশনের এক বিশাল ভাণ্ডের নিচে আমি প্রায় চাপা পড়ে যাই। প্রায় তিন মাস সময় নিয়ে আমি ওই স্তূপ থেকে বেরোতে বোরোতে দেখতে পাই যে আমার পরিকল্পিত ধারণাপত্রটি একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থে রূপ পেয়েছে। যেটি ওই বছরই ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি) একটি গ্রন্থের মর্যাদায় হাওর : জলে ভাসা জনপদ নামে প্রকাশ করে। তো, ওটি লিখবার সময় বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি সংস্কৃতিতে হাওর কীভাবে উপস্থিত তা খুঁজে দেখবারও একটা চেষ্টা আমার মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিল। এজন্য আমি আমূল মৈমনসিংহ গীতিকা চষে ফেলি, কিন্তু হাওরের ছেলে মাহবুব কবিরের কবিতার দিকে তাকাবার কথা তখন আমার একেবারেই মনে পড়ে নি। ওর ‘হিজল-জন্ম’ কবিতায় হাওরকে যে এত ভালো করে আবিষ্কার করা আছে, সেটি তখন স্মরণ করতে না-পারার আমার যে অক্ষমতা, তা গ্রন্থটির প্রকাশপরবর্তীকালে আমাকে দারুণভাবে পীড়ন করে। বহু পাঠক বাংলাভাষায় হাওরবিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ও সফল গ্রন্থ হিসেবে ওই পাঁচ ফর্মা পরিসরের প্রকাশনাটিকে গুরুত্ব দিলেও ‘হিজল-জন্ম’-এর পুনর্পাঠে আমি তুলনা করে দেখেছি যে, মাহবুব কবিরের ওই ৯৫ শব্দের কবিতাটি আমার ২৫ হাজার শব্দের গ্রন্থটির চেয়েও সফল। হায় সক্ষমতা!

যাহোক, যন্ত্রকঠিন নিষ্ঠুরতার অকুস্থল এ চোখধাঁধানো আপাতউজ্জ্বল নগর বারবারই মনে করিয়ে দেয় যে, এ স্থান অন্তত আমার নয়, যার মনোমূল ছড়িয়ে রয়েছে গ্রামদেশে। প্রতিদিনই তাই ভালোবাসার পাল্লাটা হেলে যাচ্ছে পিছে ফেলে আসা গ্রামসীমানার দিকে। সুখজাগানিয়া স্মৃতিবোধ মুচড়ে উঠছে তার মাঠ-মধ্যিখানে থাকা পক্ষীকূজনিত একলাএকা গাছকে নিয়ে, ঘাসকার্পেটে মোড়িত মাছরাঙারঙিন পুকুরপাড়কে নিয়ে, শাপলাসুন্দর বিলহাওরের অনিন্দ্যসুন্দর ইশারাকে নিয়ে, খলবল লাফিয়ে ওঠা ছোটো-ছোটো মোলা-ডানকিনে মাছকে নিয়ে, ধুলোওড়া দিনের খেজুরগাছের সীমানা আঁকা উলুঝুলু কাঁচারাস্তাকে নিয়ে, কুয়াশাজর্জর রাত্রি-লেপে-দেয়া অন্ধকারে অস্তিত্বময় লণ্ঠনের আলোয় দেখা পালাগানের নায়িকাকে নিয়ে। এই সবকিছু এবং এর বোনবেরাদর সহযোগে গড়ে ওঠা গ্রামসংস্কৃতির যে বিস্তৃত পাঠশালা, তার অনেক টুলবেঞ্চিপাঁচিলধারাপাতই খুঁজে পাওয়া যায় মাহবুব কবিরের কবিতায়। এ মন্তব্যের বিশ্বস্ত সাক্ষ্য বহন করে তাঁর ফৃ প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ কৈ ও মেঘের কবিতা  (বাংলা একাডেমীর তরুণ  লেখক প্রকল্প প্রকাশিত ধূলির বল্কল বস্তুত কৈ ও মেঘের কবিতারই বর্ধিত সংস্করণ, ওখানের বর্ধিত অংশেও একই মুদ্রাগুণ-ও-দোষ নিয়ে কথা বলেছেন একই মাহবুব)। গ্রন্থটি বাংলা কবিতার বিচিত্রলক্ষ্যী বহুস্বরব্যঞ্জিতঘোরকালসীমানায় একটি ঘাড়-কাত-করা হিজলগাছের মতো হাওরদেশের আলোহাওয়াজল গায়ে মেখে ধ্যানস্থ নিতান্ত সহজ-সরল এক নালায়েক মেধাবী তরুণের চকিত উত্থানের বিন্দুবিসর্গ অঙ্গে ধারণ করে মহীয়ান হয়ে আছে।

একজন পাঠক কবিতার কাছে যান কীসের অন্বেষণে? মাহবুব কবিরের কবিতায় যা সহজলভ্য সেসবের অন্বেষণেই কি? এর উত্তরে বলা যায়, হ্যাঁ সেসবও, তবে অবশ্যই সেসবই নয়। আরো অনেককিছুই কবিতার কাছে প্রত্যাশার থাকতে পারে, থাকেও। আমরা যখন অন্যভাষায় রচিত কবিতা পড়ি, পড়তে যাই, তখন তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকে একরকম, আর যখন বাংলাভাষায় রচিত কবিতা পড়ি তখন একরকম। কোনো কবিতা যে-ভাষায় রচিত সে-ভাষাসংস্কৃতির একটি আন্তর্স্বর সে কবিতায় থাকাই সংগত। মাহবুব বাংলায় লেখেন, তাঁর কাছে আমাদের প্রত্যাশা কাজেই বঙ্গভূমির-বঙ্গবাসীর আনন্দবেদনাউন্মাদনার ভাষিক অভিঘাত। আমাদের সে প্রত্যাশা তিনি পূরণ করেন অনেকাংশেই। যে ধন তাঁর কবিতামালার আনাচেকানাচে গচ্ছিত সে ধন বাংলা কবিতার চিরকেলে মৌলসম্পদ, বহমান বাঙালি সংস্কৃতির এ রূপগুণরেখাবলির ছাপ আমরা বাংলা কবিতার কাছে অবশ্যই প্রত্যাশা করি।

কিন্তু কোনো কবিতার সর্বস্ব যদি হয়ে ওঠে গ্রামবাংলার বিশ্বস্ত ফটোগ্রাফ, তখন কি সে কবিতার প্রতি আমরা একটু সন্দেহের চোখে তাকাই না? মুখটাকে আলগোছে একটু এদিক-সেদিক বাঁকাই না? সে-জাতের কবিতার প্রতি আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারি না, যা বস্তুত প্রদর্শন করে ক্যামেরার শৈলীচারিতা। পারি না, কারণ কবিতার কাছে আমরা যাই ক্যামেরার পারদর্শিতা দেখতে নয়। দেখতে যাই ফটোগ্রাফকে ছাড়িয়ে সৃজিত হয়ে ওঠা এমন এক পুঞ্জীভূত রূপ, যা কল্পনারঙিন অন্তরাকাশের সাদাকালো মেঘাবরণীমোড়িত, যা চিন্তনের ওইপারে চরের মতো জেগে ওঠা আবেগের ধ্রুপদী বদ্বীপ; যেই অভীপ্সারাশি পাঠককে দেয় নেচে ওঠবার মন্ত্রণা, সাঁতারস্বস্তিপ্রদ মৃদুকম্প জলের অনুকম্পা, নস্টালজিক ঝিনুক কুড়োবার তাৎকালিক ফুরসত। এসব লক্ষণসম্পৃক্ত প্রশ্নের সদুত্তরও যদি মাহবুবের কবিতা করুণা করতে সক্ষম হয়, তবে আমরা সিদ্ধান্ত করতে পারব যে, ঈদৃশ মাহবুব কবিরীয় স্বরন্যাস বাংলা কবিতায় খুব প্রয়োজনীয় কিছু করতে উপগত। আশার কথা কৈ ও মেঘের কবিতার পাতা উলটে আমরা সে দাবির সপক্ষে দাঁড়াতে-পারে-ধরনের তথ্যউপাত্ত সমুপস্থিত দেখতে পাই, এ পরিসরে সেসব উপস্থিত করে বক্ষ্যমাণ রচনাটিকে কণ্টকিত করে তুলবার মতো অসদাগ্রহ আপাতত আমার নেই, কারণ মূল্যায়নধর্মী গদ্যরচনার এহেন ক্লিশে শৈলীচর্চা আজকাল পাঠকের বমনোদ্রেগ করে বলেই আমি জানি। তথাস্তু। 

২.
আমরা যারা কবি মাহবুব কবিরকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি-জানি, তাঁর কবিতা পড়ে তাদের মনে হয় মাহবুব কবিরের পক্ষে এরকম কবিতা লেখাই সম্ভব। মগ্নতার যে পর্যায়ে থাকলে একজন মানুষের কোনো শত্রু উৎপাদিত হয় না (যদি অবশ্য হাঁটাচলার পথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হবার ব্যাপারটাকে শত্রু উৎপাদনের কারণ ভাবা না-হয়), একান্তে প্রেম নিবেদন করবার মতো সুযোগও বর্তমান থাকে না কোনো কবিমুগ্ধ তরুণীর, ধ্যান ভেঙে যাবে ভেবে হাত ধরে সাঁকো পার করে দেবার তাড়না বোধ করে না কোনো সঙ্গীপথিক; মাহবুব কবির বলতে গেলে ততখানিই নিমগ্ন। এই মগ্নতা যদি কারো নিজের মধ্যে কেবল নিজেকে নিয়ে হয়, তবে তাঁর সৃষ্টিতে কখনো বেজে উঠতে পারে না পৃথিবী নামক গ্রহে বিরাজিত আপামর জীবনের নিগূঢ় যাপনধ্বনি, যা একদিন মহাকালিক ব্যঞ্জনা লাভে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে। যেহেতু মাহবুবের কবিতায় নড়েচড়ে ওঠে বৃহৎঅর্থে বিচিত্ররূপী জীবনেরই খলবলতা, কাজেই গজকাঠি ফেলতে হয় ভিন্ন বিবেচনায়, যে, এ মগ্নতা প্রকৃতঅর্থে নিজের মধ্যে হলেও নিজেকে নিয়ে মন্ময় নয়, বরং বিস্তৃত প্রাণিকুলের সমূহতা নিয়ে তন্ময়।

আমরা জানি, কোনো কোলাহলেই প্রায় তাঁকে পাওয়া যায় না মধ্যমণিরূপে, স্বার্থদ্বন্দ্বে নিমজ্জিত সাহিত্য-রাজনীতির যে দুর্গন্ধ-কলুষতা প্রতপ্ত সাহিত্যপাড়ার ধূম্রোদ্গারী বিবর্ণ আকাশে দমবন্ধকর ল্যাংমারাখোঁচাখুচিনিন্দার অক্সাইড ছড়িয়ে যাচ্ছে শতকে-শতকে ও দশকে-দশকে, তার থেকে যোজন-যোজন দূরের সরু আলপথ দিয়ে তিনি পথ হাঁটেন, মিডিয়াবাজির মতো নিন্দার্হ বায়ুযানভ্রমণে তিনি বরাবর অনুৎসাহী ও অতৎপর। এহেন একজন ভাবুক কবিকে খুঁজেখেটে তাঁর কবিতার কাছাকাছি থেকে ভালোবেসে যাওয়া ছাড়া উৎকৃষ্ট কর্মটি আর হয় না বলেই মনে করি। যদিও আমরা কেবল ততক্ষণই এটি করে যেতে পারব, যতক্ষণ আমাদের কাছে তাঁর কবিতাকে প্রয়োজনীয় মনে হবে কোনোরূপ বাহ্য প্ররোচনাহীনভাবে এবং যতদিন স্বস্ব যোগ্যতায় তাঁর গ্রন্থসমূহ আমাদের সংগ্রহে অচর্চার ধূলিমলিনতামুক্ত থাকতে পারবে।    

৩.
১৯৯৬ সালে তাঁর প্রথম গ্রন্থ কৈ ও মেঘের কবিতা প্রকাশিত হলে পরে যে মুগ্ধবিস্ময় ঝরে পড়েছিল পাঠকের চোখমুখচিত্ত থেকে, ১৯৯৭-তে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ধূলির বল্কল তার কোনো ক্ষতিবৃদ্ধিই ঘটাতে পারে নি বস্তুত। কারণ তিনটি কবিতা বাদে আনুপূর্বিক কৈ ও মেঘের কবিতাকলাপই ধূলির বল্কল-এ ধৃত হয়ে নিজস্ব রূপ-চেহারাসমেত আসন গ্রহণ করে আছে সামনের সারিতে। পেছনের সারিতে বসা নগরের অনেকটাই নষ্টচতুরতাজ্ঞানমিশ্রিত (এসব কবিতায় তাঁর নগরবাসের অভিজ্ঞতাও জায়গা করে নিয়েছে) কবিতাসমূহ যেন জরাগ্রস্ত বৈকল্য নিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে জানান দিচ্ছে যে, আছি বলেই এটা আমাদের একরকম থাকা, না-থেকেও-থাকা বা থাকাটা থাকার মতো আমাদের চরিত্রধাতে নেই। এ কবিতারাজিতেও কৈ ও মেঘের কবিতার মাহবুব কবির বর্তমান, তবে তাঁর সঙ্গে আছে সেই চতুরতা, সেই নাগরিকতা, চিন্তার সেই সঙ্করতা, যা অনেককিছুর ব্যানারে হাতে ধরিয়ে দেয় শেষপর্যন্ত ফাঁকির হাওয়াই মিঠাই।

তবে ‘এগুলো ভালো কবিতা’, এগুলো সম্পর্কে এমন মন্তব্যও একজন নির্বিকারে করতে পারবেন, যিনি সামনের সারিতে বসা কবিতাবলির সাথে এখনো অপরিচয়ের সম্পর্কটি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছেন। লক্ষণীয়, আলোচক দ্বিতীয়োক্তদের সম্পর্কে করা এসব মন্তব্যকে আপাতভাবে প্রতিষ্ঠা দিতে চায় মাত্র, কারণ পেছনের সারিতেও একই গাত্রবর্ণ, রূপাবয়ব ও আচারাভ্যস্থতা নিয়ে দুয়েকটি কবিতা সমুপস্থিত, যাদেরকে গণভাবে অনাত্মীয় জ্ঞান করা যায় না বস্তুত। প্রথম সারির সদস্যদের একাধজন উজ্জ্বল প্রতিনিধিও পেছনের সারিতে থেকে যাওয়ায় এ সমগ্রকেও ‘অপর’ আখ্যা না-দিতে পারার মতো অন্তত একটি স্বাস্থ্যসম্মত কারণ এতে জীবিত রয়েছে। তথাস্তু।

৪.
হয় কী, অন্য কারো লেখা সম্পর্কে কিছু একটা বলতে উপগত হলেই অব্যাখ্যাত এক সংশয় এসে জাপটে ধরে, সেটা লেখনীতে বা বাচ্যে যেকোনো প্রকারেই জানান দিতে চাওয়া হোক না-কেন। সংশয় এ ভাবনার দৌরাত্ম্যে যে, আমি যা বলব সেটা আমার সাপেক্ষে সত্য হবার পাশাপাশি অন্য পাঠককুলের সাপেক্ষেও সত্য হয়ে উঠবে কি না! যখন বলা কথাটা কেবল আমার সাপেক্ষেই সত্য, অন্য আর কারো সাপেক্ষে নয়, তখন কি একটি লেখার যাথার্থ্য সম্পর্কে নিঃসন্ধিগ্ধ হতে পারেন পাঠককুল বা লেখক নিজে? এরকম গণঅগ্রহণীয় একটি মূল্যায়নধর্মী লেখাকে ইতিহাস সাধারণত কীভাবে বিবেচনা করে থাকে? অন্যদিকে একজন সৎ-কমিটেড লেখক নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করে কি ‘কি-প্রেস’ করতে পারেন, নাকি তাঁর পক্ষে সেটা করা সংগত? এসব জিজ্ঞাসা কখনোই আমার সঙ্গ ছাড়ে না। তবু, যখন অন্য কারো লেখা সম্পর্কে একজন কিছু বলতে যাবেন, তখন সেটা লেখক-পাঠক-বন্ধু-পরিপার্শ্ব নিরপেক্ষভাবে তাঁর নিজের মতো করেই বলা উচিত বলে মনে হয় আমার। যদি অন্য একজন ব্যক্তিও সে মতের সাথে একমত না হন, তবু। কারণ শিল্পসাহিত্যে যে কারো মূল্যায়ন শেষপর্যন্ত তাঁর একারই মূল্যায়ন এবং এটি কখনোই শেষকথা হতে পারে না, কথিত মতের সাথে অনেকেই একমত হলেও। তবু এখানে এটাই শিরোধার্য যে, ‘মত হলো তাই যা আমার মত--- আরো কেউ মেনে নিলে সেই মত তবে সে মহৎ’ (শঙ্খ ঘোষ)। যদি কোনো মতই প্রকৃতবিচারে শেষমত না হয়, তাহলে অন্যের মতকে গুরুত্ব না-দিয়ে নিজের মতকেই বিশদ করতে দোষ কোথায়? তবু প্রশ্ন থাকে, তৃতীয় সহস্রাব্দের একটা সময়ে দাঁড়িয়ে শিল্পসাহিত্য বা অন্য যেকোনো প্রসঙ্গে একজন ভালো-মন্দ যে মতামতই ব্যক্ত করুন না-কেন প্রকৃতপক্ষে সে মতামত তাঁর একান্তই নিজের মতামত হয়ে উঠতে পারে কি না, যেখানে যেকোনো বিষয়ে লাখো লাখো দিস্তে কাগজ লিখে ভরে ফেলা হয়েছে এবং সময়ে তার গরিষ্ঠ অংশ ইতিহাসের ধূলিআস্তরণের নিচে চাপা পড়ে গেছে? প্রশ্ন করা যায়, এ যুগে একজন যে শিল্পদৃষ্টি লাভ করেন সেটা কি কেউ জন্মগতভাবে বা কোনো স্বসৃজিত উপায়ে করেন কি না! এজন্য লাগে নিয়মিত শিল্পসহবাস, এজন্য টন টন দমবন্ধকর ট্রেসের নিচে চাপা পড়তে পড়তে পথ তৈরি করে নিয়ে মহৎ শিল্পকর্ম, মহজ্জনের শিল্পসম্পর্কিত মতামতের সংস্পর্শে আসতে হয় (এসব মতামতও প্রকৃত বিচারে মৌলিক নয়, অবাহুল্য বলা)। বিপুল পথ পরিক্রমার পরই কেবল শিল্পের আলো অঙ্গে মাখা যায়, যা বিকীরিত হয় চিত্তগভীরে, যা কারো বিষয়ভাবনায় কোনো কিছুই যোগ করে না বস্তুত, বিয়োগ করা ছাড়া, যা একজনকে খিমচে-হ্যাঁচড়ে বারবার বোঝাতে চায় যে এ অভিমুখ নিয়ত দগ্ধতার। অতএব, আপাতভাবে নিজের মনে হলেও, এখন, এই একবিংশ শতাব্দীতে, ১০০ শতাংশ নিজস্ব শিল্পপ্রজ্ঞা বলে একজনের কিছুই থাকতে পারে না। অর্থাৎ সবই সাপেক্ষ, সবই যৌথ, সব তাতেই গতায়ুর হিস্যা আছে। সবই আহরিত শিল্পপ্রজ্ঞার পৃষ্ঠপোষকতায় সৃজিত কিন্তু একান্তই নিজের বলে চালিয়ে দেওয়া গণসম্পদ। সুতরাং এখানে, এই লেখায় মাহবুব কবিরের কবিতা বিষয়ে আমি যা বলব, আপাতভাবে তা আমার কথা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা সহস্রজনেরই কথা।

কিন্তু কী বলেছি এবং বলব আমি মাহবুব কবিরের কবিতা বিষয়ে? এটা বলব যে, মাহবুব কবিরের কবিতায়ও কেবল ওর নিজের কণ্ঠ বাজে না, বাজে সহস্রজনের কণ্ঠ? হ্যাঁ, একথা আমাকে বলতেই হবে, কারণ ইতোমধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত করেছি যে, সব তাতেই গতায়ুর হিস্যা আছে, সবই যৌথঅর্জন। কাজেই সংগত যে, মাহবুব কবিরের কবিতায়ও আছে বয়সে প্রবীণ ও নবীন সব শিল্পপ্রজ্ঞার প্রবিষ্ট হয়ে যাওয়া। আমার বেলায় যদি তত্ত্বটা সত্য, মাহবুবের বেলায়ও তা সত্য, সত্য না-হয়ে পারে না। সুতরাং... জাতীয় পরিপূরক ও সদৃশ্য সব ভাব ও বাক্য তাঁর কবিতায় দৃষ্ট হওয়াও দোষের কিছু নয়। যাঁরা এসবকে দূষণীয় মনে করেন বা করে সুখ পান, তাঁদের ধরাছোঁয়ার মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য উদাহরণ চপেটাঘাতের মতো অপেক্ষা করছে সর্বশেষ সংখ্যা একবিংশ-এ মুদ্রিত কাব্যগ্রন্থ সুব্রত অগাস্টিন গোমেজের পুলি-পোলাও-এ (পরে পুলি-পোলাও স্বাধীন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে), যেখানে পাদটীকা চিহ্নিত করে কবি দেখিয়ে দিয়েছেন যে এই লাইনটি এলিয়ট বা জীবনানন্দ বা রাইসুর কবিতার পঙক্তিকে ভেঙে বা তার আলোতে দাঁড়িয়ে লেখা।

৫.
মাহবুব কবির কেন লিখেন? কেন লিখতেন রবীন্দ্রনাথ-সুরেশচন্দ্র, জীবনানন্দ-সজনীকান্ত কিংবা আজকের চঞ্চল-মাতিয়ার? আমি কেন লিখি? এ প্রশ্নের নানাবিধ জবাব থাকে। আছেও। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা জবাবের অন্তরালে একটা সাধারণ জবাব না-থেকেই পারে না যে, নতুন কিছু বলার থাকে বলে লিখি। এই নতুন আখ্যাত বস্তুটি প্রকৃতই নতুন কি না এবং নতুন হলে সেটা ঠিক কতখানি নতুন, শেষপর্যন্ত এ প্রশ্নটিই অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ ইতিহাস জানান দেয়, শুধু নামে নয়, পরবর্তী প্রজন্মের চর্চার মধ্যে বাঁচেন কেবল এই নতুনেরাই, মৌলিকেরাই। কিন্তু সমতীর্থ-সমসময় ও সমকাজে ব্রতী বলে আমি ওর কবিতা বিশ্লেষণ করে নতুন-অনতুন খুঁজে দেখবার যোগ্য পাত্র নই সম্ভবত। কারণ, সব মানুষই কমবেশি নার্সিসিস্ট। কাজেই লালনকথিত দুগ্ধ ও জলের মিশ্রণ থেকে দুগ্ধকে আলাদা করে গলাধঃকরণ করবার মতো প্রাজ্ঞ রাজহংস যাঁরা, তাঁরা সেটা করবেন। আমি মুগ্ধ সাঁতারু মাত্র, আমার বোধ-বিবেচনা অনেকটাই অন্ধ--- কখনো মনে হয় এর সব জল, কখনো বা দুগ্ধ; রাজের ন্যায় হংসে উপনীত হতে হলে সাধনপ্রয়োজনে জলাঞ্জলি দিয়ে দিতে হয় সাধের অনুপুঙ্খকেই। এক জীবনে এমন সাধক (আহারে!) আমি হতে পারলাম কই!

দায় তবু এড়ানো যায় না বলে ঠুকনি ঠুকি শব্দপাথরে। অগ্নির সন্ধান যদি মিলেই যায়, কম কী তা! সিরাজ সাঁইরা তো গোটা জীবন এমন শিক্ষেই দিয়ে গেছেন যে, পাথরেও অগ্নি থাকে। ঠুকনি ঠুকতে ঠুকতে কাজেই লীন হতে থাকি ধূলিদের বল্কলে বল্কলে। ভাসতে ভাসতেই বউকে মা ডাকার পক্ষে তাঁর অ্যাডভোকেসি করা দেখি। চমকাই না। কারণ আমাদের এক বন্ধুদম্পতিকে অতিশয় আবেগে কখনো কখনো পরস্পরকে মা ও বাবা বলে সম্বোধন করতে দেখে-শুনে থাকি এখনো। আমরা অনেকেই সেটা জানলেও সে অর্থে সমাজপ্রতিষ্ঠান এটা জানে না, জানলে হৈচৈ হতে পারে। সে যাহোক, আনুষ্ঠানিক বিয়ে-থা না-করেই একজোড়া নারী-পুরুষের একত্রবাস ও সন্তান জন্মদান কিংবা ধর্মবদল না-করেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জায়া ও পতির এক ছাদের নিচে দীর্ঘ সংসারপাতিতেও যখন আমরা আপত্তি করি না, তখন একজন তার স্ত্রী বা স্বামীকে শখ করে কখনো মা-মাসী বা বাবা-মেসো ডাকতে চান তো ডাকুন। মাহবুবের নিজেরও বিবাহের পর স্ত্রীকে মাঝে মধ্যে মা বলে ডাকার যে আকাঙ্ক্ষা, তাঁর সে কাঙ্ক্ষাও না হয় তিনি বাস্তবায়ন করলেন। কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না যে কবিতা করে জনসাধারণ্যে এটা বলবার কী আছে! হ্যাঁ, কবিতায় বিষয়টা নতুন। কিন্তু বউকে মা কিংবা স্বামীকে বাবা বললে সমাজপ্রতিষ্ঠান আরোপিত বিবাহসম্পর্কের নেতিশৃঙ্খল থেকে মানুষ নামের জীবেদের উত্তীর্ণ হবার পক্ষে কী এমন বিপ্লব সাধিত হবে তা আপাতত বোধগম্য নয়, যেটির উদ্বোধন তিনি তাঁর ‘মা বাবা’ নামক কবিতায় ঘটিয়েছেন। আর সেরকম কিছু ঘটবার সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই একটি গ্রন্থপরিসরে এর প্রাসঙ্গিকতা ঠিক আয়ত্তে আসে না। এসব নতুনত্বে কৌতুকরসের (হাস্যরস নয় বটে!) অধিক পাঠককে আর কিছু দেয়া যায় না বলেই মনে হয় আমার। যার কাজ কৌতুক করা, সে করলে তা সবার কাছেই স্বাভাবিক বোধ হয়, কিন্তু আমি যতটা বুঝি, তাতে বলব যে কবি মাহবুব কবির মোটেই কৌতুক করবার মতো হালকা স্বভাবের মানুষ নন। এ প্রতিপাদ্যে আমার আপত্তিটা ঠিক এ কারণেই উচ্চকিত। 

৬.
লেখাটি এ পর্যন্ত লিখিত হবার পর অকারণেই থেমে যায়। দীর্ঘদিন পড়ে আছে এভাবেই। এর মধ্যে ২০০৯-এ ফুলচাষি মালি যাই বলো নামে কবির আরেকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়ে গেছে। ধূলির বল্কল-এর গ্রন্থমর্যাদা কবি-কর্তৃক প্রত্যাহৃত হয়েছে ও কৈ ও মেঘের কবিতার হয়েছে পুনর্মুদ্রণও। এ সবকিছু মিলিয়ে কবি মাহবুব কবির ও তাঁর কবিতা বিষয়ে আরো কিছু কথাবার্তা এই পরিসরে বলাটা জরুরি হয়ে রয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ তা বলবার অবকাশ পাবো তা এখনো জানি না বিধায় যেটুকু লিখিত হয়েছে সম্মানিত পাঠককে সেটুকুরই সহভাগী করে রাখবার উদ্যোগ নেয়া হলো। কে জানে, পাঠকের সৎ-প্রতিক্রিয়া এই লেখাটি সমাপ্ত করবার ব্যাপারে আমার দিকে কোনো প্রেরণার প্রবাহ বয়ে আনলেও আনতে পারে।

পরিশিষ্ট
মাহবুব কবিরের কয়েকটি কবিতা


হিজল-জন্ম


সমুদ্রের সবচেয়ে ছোট মেয়ে এই হাওড়। আষাঢ়ে ভাসা জল আর হু হু
ভাটি হাওয়ায় বুক অবধি ডুবে আছি। শরীর জুড়ে প্রাগৈতিহাসিক গন্ধ।
গুপ্ত-স্রোত রহস্য করে বলে, জলের পাহারাদার।

আসে অনেকেই। জলপোকা, ভাটিয়ালি পাখি আর সর্প-বন্ধুদের থেকে
ক্রয় করি জলদ অভিজ্ঞান।

মাইল মাইল দূরে দ্বীপের মতো তোমাদের গ্রাম। যখন মেঘের পায়ে
ঘুঙুর, বাতাসের পিঠে ভেঙে পড়ে বাতাসের পাহাড়। আতংকিত
তোমাদের নাও-ট্রলার ঘাড় কাত্ করে আকাশের দিকে তাকায়, ডুবে
মরার ভয়ে দ্রুত ডাঙার দিকে ছোটে।
আমার স্বপ্ন মেঘ,
মেঘ আমার নারী।
জলমগ্ন ছমাস। তারপর ধীরে ধীরে বড় হয় যত স্বপ্ন মেধা শ্রম, সব
আমার সবুজ সন্তান।


কৈ ও মেঘের কবিতা


পুকুরে খলবল করে মাছ।
বড়শিতে সিঁদলের মাংস গেঁথে দিলে কৈ পাওয়া যায়,
আর কেঁচো দিলে শিং।

ডেকে যায় গভীরা, রজঃস্বলা মেঘ।
পুকুরে কেমন দিগক পালাচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে কৈ।

পিতলের কলস ভরে গেছে,
কোথায় যেন পালিয়ে যাচ্ছিলো ওরা পুকুরের
পাড়-পাহাড় বেয়ে বেয়ে।
বলেছে দাদু,
এরকমই হয়
বর্ষায় মেঘ ডেকে উঠলে।

ও খুকুমনি মেঘ, তুমি ঋতুবতী হয়ে ওঠো দ্রুত।

হত্যামুখর দিন

আজ ঈদ। আজ ছুরি দিবস।

উল্লাসে ফেটে-পড়া ছোট ছোট ছুরি
আর চাকুদের পিতার রক্তাপ্লুত নেশায় চুর,
ঝিম মেরে বসে আছে কাছেই,
তার চোখ হিলহিলে তৃপ্তিতে ঢুলুঢুলু, আঁকাবাঁকা।

এদিকে ছুরিদা ও চাকুদা
কী দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছে
ফর ফর ধ্বনি,
এইভাবে ধীরে ধীরে ছুরি আর চাকুদের
উৎসব আজ। আজ ঈদ।
হত্যামুখর দিন।
আহা,
নতুন পোশ্কে আনন্দে মেতেছে শিশুরা।

আমার মাংস

গাছ থেকে পাখিটাকে গুলতি মেরে পেড়ে আনলাম।
এখন চামড়া ছাড়িয়ে মাংস টুকরো টুকরো করছি,
নিজ হাতে রান্না করছি নিজের মাংস।
আমার মাংস বড় সুস্বাদু।

পৃথিবী

বাহ্ পৃথিবীটা দেখছি একেবারে নবীনা
এর নদীতে ডুব দেয়া ভালো।
এরকম স্বচ্ছল নদীর ছলচ্ছলে
মনপবনের নাও ভাসিয়ে দেয়া মন্দ নয়।
বাইসন ম্যামথের পেছনে ছুটতে ছুটতে
একদিন এরকম একটি পৃথিবীর সঙ্গে
দেখা হয়েছিল,
তার কথা মনে পড়ে

আমি প্রতিদিন নতুন নতুন পৃথিবীর
সাক্ষাৎ পেতে ভালোবাসি।
আমি জানি অতীত মানে পুরনো নয় ;
সে প্রতিদিন অষ্টাদশী রমণী, প্রতিদিন
বিবাহ বার্ষিকী, প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করা।

পৃথিবী রজঃস্বলা চিরকাল,
আমি এর সাথে খেলা করবো এখন।



ভাষাবস্তু অবয়বে ধরে রাখে ভাষাচিন্তারেখা

ধর্মতত্ত্ব, বিবর্তনতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে অত্যল্প জানাশোনা আমাকে এরকম একটা গড় ধারণা দেয় যে, মানবপ্রজাতি আদিতে এক গোষ্ঠীভুক্ত ছিল। বি...