Saturday, August 8, 2009

যৌনকর্মীর কর্ম অথবা কে তোরে পতিতা বলে মা!

ধারণা করা হয়, নারীজাতি একসময় স্বাধীন ছিল। নারী-পুরুষ উভয়ে তখন জীবিকার জন্য মিলিতভাবে খাদ্যদ্রব্যের সন্ধান করত এবং যথেচ্ছ ভোগ করত। ভোগে-ত্যাগে উভয়ের অধিকারই তখন ছিল সমান। ক্রমে উৎপাদনের উপায়সমূহ ব্যক্তি মালিকানায় (অবশ্যই পুরুষদের হাতে) চলে যাবার মাধ্যমে সামাজিক শ্রম বিভাজন শুরু হয় এবং তখন থেকেই উৎপাদিত দ্রব্য পণ্য বলে বিবেচিত হতে থাকে। আজ অবধি উৎপাদিত দ্রব্য পণ্য বা কমোডিটি বলেই চিহ্নিত হয়ে আসছে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে পণ্যদ্রব্য কেবল ‘প্রত্যক্ষভাবে সামাজিক প্রয়োজন মেটানো’ হলেও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সেটা মুনাফার দিকে হেলে পড়া। এ অর্থব্যবস্থায় শ্রমশক্তির উৎপাদনই কেবল পণ্যদ্রব্য পদবাচ্য নয়, এমনকি শ্রমশক্তিও সেখানে পণ্যদ্রব্য। এই সংজ্ঞাভাষ্যের সীমাকেও অতিক্রম করে নারী যখন বাধ্য হয়ে বা স্বেচ্ছায় ভোগ্যা হিসেবে নিজের মহিমা থেকে অবনত, তখন গোটা নারীমানুষটিই পরিণত হয় পণ্যে। এখানে সে শ্রম দিয়েও প্রচলিত অর্থে শ্রমশক্তি হিসেবে স্বীকৃত হয় না, হয় ভোগ্যবস্তুরূপে।1 এই প্রবন্ধে নারীর এরকম ভোগ্যপণ্য হয়ে ওঠার ইতিহাস এবং ভোগবাণিজ্যের বর্তমান গতি-প্রকৃতি অনুসন্ধানেরই চেষ্টা করা হবে।

আমরা জানি, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার এক নবতর সৃষ্টি হলো বিশ্বায়ন ধারণা। কাভালজিৎ সিংয়ের মতে, বিশ্বায়ন এমন এক বিশ্বের ধারণাকে তুলে ধরে যেখানে জটিল সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়াগুলির ক্রিয়াশীলতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সীমান্ত বা জাতীয় সীমারেখার কোনো ভূমিকা থাকবে না।2 বিশ্বায়নের আওতা এত বিশাল হওয়া সত্ত্বেও এ ব্যবস্থার প্রধান মনোযোগের কেন্দ্র অর্থনীতি অর্থাৎ মুনাফা। আর তাই এই ব্যবস্থা সবকিছুকেই পণ্যীকরণের দিকে নিয়ে যেতে চায়– বস্তুকে তো বটেই, এমনকি মানুষকেও। বস্তুর নিজের ভালোমন্দ কোনো কিছুই ভাববার-বলবার নেই, কিন্তু মানুষের আছে। মানুষ নিজে পণ্য হবার ব্যাপারে আপত্তি জানাতে পারে এবং পণ্যসংস্কৃতি বা পণ্যীকরণ প্রথাকে প্রতিরোধের লক্ষ্যে আন্দোলনও করতে পারে– কিন্তু কোনো-না-কোনোভাবে পণ্য ব্যবহার ব্যতিরেকে টিকে থাকতে পারে না। মানুষই পণ্যীকরণ প্রথা চালু করেছে ও টিকিয়ে রেখেছে। মানুষই পণ্য সরবরাহকারী এবং মানুষই এর ভোক্তা, যদিও সকল পণ্য সকল মানুষের প্রয়োজনে লাগে না, সকল পণ্যের প্রতি সকলে আকর্ষণ বোধ করে না এবং সকল পণ্যের সুবিধা ভোগে সকলে সক্ষমও হয় না।

আমরা দেখতে পাই, এই পণ্যদুনিয়ায় পণ্য হবার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামের মাধ্যমে বিপ্লব-বিদ্রোহ যেমন জারি করা আছে, তেমনি তার চতুর্গুণ শক্তিতে মানুষ, বিশেষ করে নারীমানুষকে পণ্য করবার নেটওয়ার্কসমূহের জোয়ার সুনামির মতো প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে আমাদের দিকে। আর এই সুনামির মূল প্রতিপাদ্য যৌনবাণিজ্য ও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মুনাফা। এর তীব্রতা এতই প্রবল যে সেটি গোটা সভ্যতাটিকেই যেন আজ ভাসিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যত।

২.
অর্থের বিনিময়ে যৌনতা বিক্রির ইতিহাস সুপ্রাচীন। ওয়েবস্টার অভিধান মতে, সুমেরিয়ানদের মধ্যেই প্রথম পবিত্র পতিতার দেখা মেলে। প্রাচীন গ্রন্থাদিসূত্রে, যেমন ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত হিরোডেটাস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৪-খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০/২০)-এর লেখায় এই পবিত্র পতিতাবৃত্তির বহু নমুনা পাওয়া যায়, যেটি প্রথম শুরু হয়েছিল ব্যাবিলনে। সেখানে প্রত্যেক নারীকে বছরে অন্তত একবার করে যৌনতা, উর্বরতা ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতির মন্দিরে যেতে হতো এবং সেবাশুশ্রূষার নমুনা হিসেবে একজন বিদেশীর সাথে নামমাত্র মূল্যে যৌনসঙ্গম করতে হতো। একই ধরনের পতিতাবৃত্তির চর্চা হতো সাইপ্রাস এবং করিন্থেও। এটি বিস্তৃত হয়েছিল সার্দিনিয়া এবং কিছু ফিনিশীয় সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে ইস্টার দেবতার সম্মানে। ফিনিশীয়দের মাধ্যমে ক্রমশ এটি ভূমধ্যসাগরের অন্যান্য বন্দর শহরগুলোতেও সংক্রমিত হয়, যেমন সিসিলি, ক্রটন, রোসানো ভাগলিও, সিক্কা ভেনেরিয়া এবং অন্যান্য শহরে। এক্ষেত্রে অনুমান করা হয় এশিয়া মাইনর, লাইদিয়া, সিরিয়া ও এট্রাকসনের নামও। ইসরায়েলে এটি একটি সাধারণ ব্যাপার ছিল, যদিও কয়েকজন প্রফেট, যেমন ইজাকেইল, এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সমাজে পতিতারা ছিল স্বাধীন এবং তারা বিশেষ ধরনের পোশাক পরিধান করা ও কর দেবার ব্যাপারে আদিষ্ট ছিল। গ্রিক হেটায়েরার মতো জাপানে ছিল জেইসার।

পাশ্চাত্য সভ্যতার জতুগৃহ প্রাচীন গ্রিকের এথেনাইয়ের কবি সোলোন (খ্রিষ্টপূর্ব ৬৩০-খ্রিষ্টপূর্ব ৫৯০), যিনি তৎকালীন গ্রিকের সাতজন জ্ঞানী লোকের একজন হিসেবে গণ্য হতেন, খ্রিষ্টপূর্ব ছয় শতকে এথেন্সে প্রথম পতিতালয় স্থাপন করেন। এই পতিতালয়ের উপার্জন দিয়ে আফ্রোদিতিকে নিবেদন করে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। মধ্যযুগে ইউরোপে ব্যাপকভাবে পতিতাবৃত্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং পৌরসভার মাধ্যমে পতিতালয়সমূহ পরিচালিত হতে থাকে।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র থেকে পতিতা ও পতিতাবৃত্তি সংক্রান্ত ভারতবর্ষীয় চিত্র পাওয়া যায়। তাঁর জীবৎকাল নিয়ে পণ্ডিতে-পণ্ডিতে মতদ্বৈধতা আছে। তবে অনেকের মতে কৌটিল্য বেঁচেছিলেন মৌর্য শাসনামলে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুযায়ী, তিনি প্রথম মৌর্যসম্রাট চন্দ্রগুপ্তের (খ্রিষ্টপূর্ব ৩২১ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২৯৭) কাউন্সেলর ও উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত অর্থশাস্ত্রের মতে, দেহব্যবসা একটি প্রতিষ্ঠিত প্রথা। পুরোপুরি ঘৃণিত বা গোপন নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এর অনুমোদন করে এবং সংগঠকের ভূমিকা নেয়। ঋগ্বেদ এবং জাতকেও এর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন পণ্ডিতরা। এমনকি কৌটিল্যের সময় দেহব্যবসা শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত হয় বলে জানা যায়, যে শিল্পের নাম ছিল বৈশিক কলা। বিশেষজ্ঞরা এ শিল্পের চর্চা করতেন এবং শিক্ষা দিতেন।3

কৌটিল্য জানান যে, তখন দেহব্যবসা ছিল মূলত শহরকেন্দ্রীক। নগরজীবনের অবশ্যঅঙ্গ ছিল এটি। রাজকোষের আয়ের যে বিভিন্ন উৎস ছিল তার মধ্যে ‘দুর্গ’ নামক বিভাগটিতে বেশ্যা, জুয়াখেলা ও আবগারী বিভাগের পরিদর্শকের কথা বলেছেন কৌটিল্য। অর্থশাস্ত্রে এমনকি গণিকাধ্যক্ষেরও উল্লেখ আছে। তাঁর কাজ ছিল রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে গণিকাদের সংগঠিত ও দেখভাল করা। পৃথিবীর অনেক দেশ, যাদের প্রধান আয় পর্যটন শিল্প নির্ভর, সেসব দেশে এখনো সরকারি তত্ত্বাবধানেই দেহব্যবসা পরিচালিত হয়। এমনকি বাংলাদেশ রাষ্ট্রও এখনো এ প্রথাকে অনুমোদন করে যাচ্ছে পতিতাবৃত্তিতে আগ্রহী যেকোনো আঠারো বছর বয়সোত্তীর্ণ নারীকে দেহব্যবসা চালাবার জন্য লাইসেন্স দিয়ে, সারাদেশে ১৪টি পতিতালয় পরিচালনা করে এবং সেখান থেকে ট্যাক্স গ্রহণ করে।4

৩.
প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ ও কূটনীতিক মেগান্থিনিস প্রথম মৌর্যশাসক চন্দ্রগুপ্তের সময়ে ভারতে এসেছিলেন। তিনি তাঁর রচিত গ্রন্থে এক ধরনের পরিদর্শকের কথা বলেছেন, যারা রাজ্যের সকল কার্যক্রমের ওপর গণিকাদের সহায়তায় নজর রাখতেন এবং রাজার কাছে গোপন রিপোর্ট দিতেন। স্টার্নবাকের মতে, গণিকা মানে সরকারি কর্মচারী। অন্য যেকোনো সরকারি কর্মীর মতোই এরা। কৌটিল্য এই অর্থেই ব্যবহার করেছেন শব্দটি।5 অর্থশাস্ত্রে গণিকারা ছাড়াও সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যারা দেহব্যবসা করতেন তাদের একটি তালিকা দেয়া আছে– যথা পুংশালী অর্থাৎ সাধারণ দেহব্যবসায়ী, সুরাসুন্দরী অর্থাৎ পানশালার ওয়েটার, বন্ধকী অর্থাৎ ঘটনাচক্রে দেহব্যবসায় জড়িয়ে পড়া গৃহবধূ, বেশ্যা অর্থাৎ কারুকুশীলব বা গুপ্তচর, সাধ্বি-ব্যঞ্জনা অর্থাৎ সতীত্বের ভান করে থাকা পুলিশের গুপ্তচর, দেবদাসী অর্থাৎ মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত পবিত্র বারাঙ্গনা, পরিব্রাজিকা অর্থাৎ আড়কাঠি বা দালাল। এঁদের সামাজিক মর্যাদা ছিল রাজঅনুগ্রহপুষ্ট গণিকাদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম। যুদ্ধক্ষেত্রে, শিকারে এবং আরো অনেক সময় রাজার সঙ্গে গণিকাদের থাকবার কথা লিখেছেন গ্রিক লেখকরা। মহাভারতেও গণিকাদের বর্ণময় জীবন ও রাজকীয় জাকজমকের বর্ণনা আছে। যেমন উদ্যোগপর্বে কৌরবপক্ষের বেশ্যাদের কাছে যুধিষ্ঠির শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। কৌরবসভায় শ্রীকৃষ্ণ যখন শান্তির জন্যে দৌত্য করতে আসেন তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানান গণিকারা। রামায়ণে দেখা যায়, রাম ভরতকে জিজ্ঞাসা করছেন যে তিনি গণিকা, ঘোড়া ও হাতির ব্যাপারে সন্তুষ্ট কি না। জৈন লেখক হেমচন্দ্রের লেখায় একটি কিংবদন্তীর উল্লেখ আছে যে, রাজা নন্দ গণিকার গর্ভজাত এক নাপিতের সন্তান। বৌদ্ধ গ্রন্থগুলোতে বিখ্যাত গণিকা অম্বাপালী, সালাবতী, সামা, সুলমা ছাড়াও এমন অনেকের কথা বলা আছে, যারা বুদ্ধি ও শিল্পীত দক্ষতার গুণে সমাজে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ তৎকালীন গণিকা নারীরা সমাজে-রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে সম্মান পেতেন এবং সাধারণ সভ্যসমাজের প্রতিনিধিরা ছাড়া রাজরাজড়ারাও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন। তাদেরকে যখন তখন যে কেউ ভোগার্থে ব্যবহার করতে পারত না কিংবা মন্দ কথা বলতে পারত না। এমনকি গণিকাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তিরও অধিকার ছিল। রাজকোষ থেকে বেতন ছাড়াও তাঁরা অলংকার, পোশাক-আশাক, অন্যান্য উপঢৌকন, উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি লাভ করতেন। কোনো গণিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে বা তাঁর অবিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে বলপূর্বক দেহমিলনের চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ আর্থিক সাজা হতো।

৪.
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেশ্যাবৃত্তি হলো স্বামী বা বন্ধুকে ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে নগদ অর্থ বা মূল্যবান অন্যকিছুর বিনিময়ে বাছবিচারহীনভাবে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া। এই বেশ্যাবৃত্তি এখন আর শিল্পের পর্যায়ে নেই। তবে নারীর রূপ, যৌবন ও শরীরের বাণিজ্যিক ব্যবহার, যেমন পর্নো ওয়েবসাইট তৈরি, পর্নো সিডি তৈরি, ফ্যাশন শো, অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণ, পর্নো ম্যাগাজিন প্রকাশ, বিজ্ঞাপনচিত্রে উদ্ভট ও অশ্লীল কায়দায় নারীমডেল ব্যবহার ইত্যাদি মাধ্যমেও নারীত্ব প্রতিনিয়ত অপমানিত হচ্ছে, যদিও এগুলো শিল্প নামধেয়। সরাসরি দেহব্যবসা দিয়ে তো বটেই, এমনকি এসব শিল্পমাধ্যমে নারীকে অশ্লীল কায়দায় ব্যবহার করেও বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মুনাফা করা হচ্ছে। কৌটিল্যের সময় থেকে আমরা প্রায় আড়াই হাজার বছর অতিক্রম করে এসেছি। দাবি করি যে আমরা সভ্যতার চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গেছি। আর তার নমুনা হলো এই যে, এখন বলপূর্বক গণিকাসঙ্গ করলে কারো কোনো শাস্তি হয় না। আর এ কারণেই সাধারণ-সতীসাধ্বী কোনো অসহায় নারী ধর্ষিত হলেও আদালতে তাঁকে দুষ্টচরিত্রের নারী অর্থাৎ পতিতা প্রমাণ করবার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী যদি এটি প্রমাণ করতে পারেন, তবে আসামির কোনো শাস্তি হয় না অথবা শাস্তি হলেও তা হয় নামমাত্র। গণিকাধর্ষণ সভ্য সমাজের আদালতে বড়ো কোনো অপরাধ হিসেবেই গণ্য হয় না। বরং উলটো ঘটনা আমরা আমাদের গ্রামসমাজে হামেশাই ঘটতে দেখি যে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে নারীকেই প্রধান অপরাধী হিসেবে বিচার করা হয়। বলা হয়, ধর্ষিতা ধর্ষককে প্রলুব্ধ করেছেন। তাই তাঁকে ১০১ দোররা মারা হয়, মাথা মুড়িয়ে গ্রাম থেকে বের করে দেয়া হয় কিংবা মাটিতে পুঁতে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলা হয়। যারা এসব ফতোয়ায় কাজির দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা অবশ্যই হন পুরুষ, এবং তাঁরা সেরকম পুরুষ, খোঁজ নিলে যাঁদের বিবাহ-বহির্ভূত যৌনসঙ্গের একাধিক ঘটনার প্রমাণ মিলবে। এমনকি ইতঃপূর্বে যাঁরা হয়ত দুয়েকটা ধর্ষণ ঘটনারও নায়ক ছিলেন। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোয় সে খোঁজ নেবার অবস্থা সত্যিকারার্থেই এখনো তৈরি হয় নি। কারণ সমাজ সেটার কোনো প্রয়োজনই বোধ করে না। যেহেতু আমাদের সমাজে পুরুষের একাধিক নারীসঙ্গ করাকে কোনো দোষের ব্যাপার বলেই মনে করা হয় না।

এখানে প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় বাইবেলের একটি গল্প তুলে ধরা যায়– ‘যীশু জৈতুন পর্বতে গেলেন। আর প্রত্যুষে তিনি পুনর্বার ধর্মধামে আসিলেন ; এবং সমুদয় লোক তাঁহার নিকটে আসিল ; আর তিনি বসিয়া তাহাদিগকে উপদেশ দিতে লাগিলেন। তখন অধ্যাপক ও ফরীশীগণ ব্যভিচারে ধৃত একজন স্ত্রীলোককে তাঁহার নিকটে আনিল, ও মধ্যস্থানে দাঁড় করাইয়া তাঁহাকে কহিল, হে গুরু, এই স্ত্রীলোকটি ব্যভিচারে, সেই ক্রিয়াতেই ধরা পড়িয়াছে। ব্যবস্থায় মোশি এই প্রকার লোককে পাথর মারিবার আজ্ঞা আমাদিগকে দিয়াছেন ; তবে আপনি কী বলেন ? তাহারা তাঁহার পরীক্ষাভাবেই এই কথা কহিল, যেন তাঁহার নামে দোষারোপ করিবার সূত্র পাইতে পারে। কিন্তু যীশু হেঁট হইয়া অঙ্গুলি দ্বারা ভূমিতে লিখিতে লাগিলেন। পরে তাহারা যখন পুনঃ পুনঃ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল তিনি মাথা তুলিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সেই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক। পরে তিনি পুনর্বার হেঁট হইয়া অঙ্গুলি দিয়া ভূমিতে লিখিতে লাগিলেন। তখন তাহারা ইহা শুনিয়া, এবং আপন আপন সংবেদ দ্বারা দোষীকৃত হইয়া, একে একে বাহিরে গেল, প্রাচীন লোক অবধি আরম্ভ করিয়া শেষ জন পর্যন্ত গেল, তাহাতে কেবল যীশু অবশিষ্ট থাকিলেন, আর সেই স্ত্রীলোকটি মধ্যস্থানে দাঁড়াইয়াছিল। তখন যীশু মাথা তুলিয়া, স্ত্রীলোক ছাড়া আর কাহাকেই দেখিতে না পাইয়া, তাহাকে কহিলেন, হে নারী, যাহারা তোমার নামে অভিযোগ করিয়াছিল, তাহারা কোথায় ? কেহ কি তোমাকে দোষী করে নাই ? সে কহিল, না, প্রভু, কেহ করে নাই। তখন যীশু তাহাকে বলিলেন, আমিও তোমাকে দোষী করি না ; যাও এখন অবধি আর পাপ করিও না।’6 এই গল্পের মর্মার্থ ব্যাখ্যা করবার দরকার নেই। বাইবেলের যুগের অধ্যাপক ও ফরিশীগণের মতো আমাদের ফতোয়াবাজরাও নিষ্পাপ নন। তাঁদের থেকে এখনকার ফতোয়াবাজদের সূক্ষ্ম পার্থক্যটুকু এই যে, তাঁরা আপন সংবেদ দ্বারা তাড়িত হলেও এঁরা তা হন না।

৫.
অনেকের মতে বিষ্ণুগুপ্ত, চানক্য, কৌটিল্য একই ব্যক্তি। এমনকি কেউ কেউ বলেন কৌটিল্যই বাৎসায়ন। তা যাহোক, এ ব্যাপারে প্রমাণ হাজির করা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। বাৎসায়ন রচিত কামশাস্ত্র বা কামসূত্র গ্রন্থের বৈশিকাখ্যং অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘রুচি হইতে যে পুরুষগ্রহণপ্রবৃত্তি তা স্বাভাবিক আর অর্থার্জনার্থ যে প্রবৃত্তি তা কৃত্রিম।’7 বাৎসায়ন বর্ণিত অর্থার্জনার্থ এই কৃত্রিম প্রবৃত্তিই নিন্দার্হ। এ প্রবৃত্তিই বর্তমান বিশ্বে এক নম্বরের বাণিজ্যবিষয়, অনেক দেশের রাজকোষের অর্থের এ প্রবৃত্তিই প্রধান উৎস। তবু বিভিন্ন কারণে দেহব্যবসাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নিয়েছিলেন কৌটিল্য। অবৈধ নারীসংসর্গ বোঝাতে তিনি ‘বাহ্যবিহার’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু এই ‘বাহ্যবিহার’-এর পক্ষে বা বিপক্ষে স্পষ্ট করে কিছুই বলেন নি তিনি। বাৎসায়ন বলেছেন, গণিকা অথবা বিধবাদের সঙ্গে যৌনমিলন সমর্থন করা হয় না আবার নিষিদ্ধও নয়। লেকির মতে, গণিকাবৃত্তি হলো সমাজের মাত্রাতিরিক্ত যৌনকামনা বেরিয়ে যাওয়ার একটি সেফটিভালভ। তাঁর মতে, নিজে মূর্তিমতি পাপ হলেও পরিণামে পুণ্যের জিম্মাদার এই গণিকা। সংখ্যাহীন সুখী পরিবারের প্রশ্নাতীত পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যেত এরা না থাকলে– নানা মত আসে যায় কিন্তু সমাজের বিষ কণ্ঠে ধারণ করে নীলকণ্ঠী হয়ে রয়ে যায় মানবিকতার এই পূজারিণীরা। বার্ট্রান্ড রাসেল লেকির মত সম্পর্কে বলেন, নীতিবাগীশরা লেকির মুণ্ডুপাত করেছেন। লেকি তাদের কেন ক্ষেপিয়ে তুলেছেন তাঁরা নিজেরাই তা জানেন না। আবার লেকি যা বলেছেন সেটা অসত্য বলেও তাঁরা প্রমাণ করতে পারেন নি।8

যৌনকর্মীদের উচ্ছেদ করা-না-করা প্রশ্নে, পুনর্বাসন প্রশ্নে, নৈতিকতা প্রশ্নে, ধর্মীয় প্রশ্নে, অধিকারের প্রশ্নে আমাদের দেশেও এরকম তর্ক-বিতর্ক আমরা অনেক শুনেছি কয়েকবারের চেষ্টায় কয়েকটি পতিতালয় উচ্ছেদের সময়ে। কিন্তু লক্ষণীয় যে পতিতাবৃত্তি টিকিয়ে রাখবার পক্ষে দেয়া সর্বকালের সকল মতই হলো পুরুষদের। কারণ এ প্রথার ভোক্তা পুরুষরাই। সরাসরি পতিতাবৃত্তির পক্ষে নারীনেত্রীদের সাধারণত মত দিতে দেখা যায় না। তবে এ বিবেচনায় নারীনেত্রীদের মধ্যে দু’টো স্পষ্ট ভাগ আছে। এক ভাগের নেত্রীরা পতিতাবৃত্তিকে পুরোপুরি যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণ হিসেবে দেখেন। তাঁরা চান এ প্রথা চিরতরে বন্ধ হোক। এই ভাগের নারীনেত্রীদের চেষ্টায় ১৯৯৯ সালে সুইডেনে একটি আইন করা হয়েছে, যেখানে যৌনতা বিক্রি কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু যৌনতা ক্রয় রীতিমতো অপরাধ। এই আইন ভোক্তাদের নিরুৎসাহিত করবে যৌনসেবা ক্রয়ে। আর ক্রেতা যখন থাকবে না তখন এটি আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। আরেক ভাগ এটিকে পতিতাদের অধিকার, নিজস্ব ইচ্ছা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে দেখেন। তাঁরা পতিতাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, যথার্থে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না-করে পতিতালয় উচ্ছেদের বিরোধিতা করেন এবং এই পেশাকে কর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বলেন। দেহব্যবসায়ে নিয়োজিতদের পতিতা, বেশ্যা, গণিকা, খারাপ মেয়েছেলে ইত্যাদি না-বলে যৌনকর্মী এবং তাদের কর্মকে যৌনকর্ম বলার পক্ষে পৃথিবীব্যাপী তাদের আন্দোলনও জারি করা আছে। এই দল জার্মানিতে আইন সংস্কারের জন্য চেষ্টা করার ফলে গত ২০০২-এ সে দেশে যৌনকর্ম একটি নিয়মিত পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও ওই আইনে যৌনকর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত আছে। সারা পৃথিবীতেই এসব দাবিতে আন্দোলন সচল আছে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি এবং বাংলাদেশের দুর্জয় নারী সংঘও এরকম দাবিতে সক্রিয়।

৬.
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সারা পৃথিবীতে যে বিপুল পরিমাণ নারী এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বা হতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা যেভাবেই হোক তাঁদের শ্রমই বিক্রি করছেন। এক দিনের বা এক মাসের নোটিসে এদের এ পেশা থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব নয়। একটি বড়ো শহরের সবকটি বড়ো বড়ো শিল্পপ্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে শহরে যেরকম দুর্যোগ নামবে, এটিকেও সেভাবেই দেখা দরকার। ১৮৫৩-য় তৈরি এক পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতার তৎকালীন চীফ ম্যাজিস্ট্রেট এলিয়ট গোটা কলকাতা শহরে ৪০৪৯টি বেশ্যাগৃহ আছে বলে স্বীকার করেন, যাতে বাস করছিলেন মোট ১২,৪১৯ জন যৌনকর্মী। অর্থাৎ গৃহপ্রতি যৌনকর্মীর সংখ্যা ছিল ৩ জনেরও অধিক। ১৮৬৭-তে কলকাতার হেলথ অফিসার ফেভার-টোনার যৌনকর্মীর সংখ্যা ৩০,০০০ জন নির্ধারণ করেন। ১৯১১-র আদশুমারি অনুযায়ী এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪২৭১ জনে। ১৯২১ এবং ১৯৩১-এর আদমশুমারিতে উল্লিখিত সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১০,৮১৪ এবং ৭,৯৭০ জনে। কিন্তু ১৯৩২-এ বেঙ্গল উইমেনস ইউনিয়নের সভানেত্রী দাবি করেন যে পুলিশের হিসেবে কলকাতার যৌনকর্মীর সংখ্যা ২০,০০০ জন।9 ১৯৩২-এর পরে অনেক দিন বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভারতবর্ষে সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক নানা উত্থান-পতন ঘটেছে। বিশ্বায়নের থাবায় দিকে দিকে দারিদ্র্য আরো বেড়েছে, বেড়েছে পাচার, বেড়েছে উন্মত্ততা। ফলে বর্তমানে কলকাতা শহরে যৌনকর্মীর সংখ্যা বেড়েছে বৈ তো নয়। দেবাশিস বসুর দেয়া তথ্য মতে, ১৯৯৩-এ অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের মহামারীতত্ত্ব বিভাগ যে জরিপ চালায় তাতে কলকাতা ও হাওড়া শহরে মোট ১৯টি যৌনপল্লি চিহ্নিত হয়। প্রতিটি পল্লিতে যদি গড়ে ২০০ করে গৃহও ধরা হয়, তাহলে মোট গৃহ দাঁড়ায় ৩৮০০টি, এবং গৃহপ্রতি ৩ জন করে ধরলে যৌনকর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১১,৪০০ জন। ভাসমান যৌনকর্মীর সংখ্যা যদি ৮,৬০০ ধরা হয় তবে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২০,০০০ জনে। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির হিসেবটা ঠিক এরকমই। তাদের মতে, কলকাতার মোট যৌনকর্মীর মধ্যে ব্রথেল-বেসড ১২,০০০ জন এবং ফ্লটিং ৮,০০০ জন। কিন্তু লক্ষণীয় যে, এই অঙ্কে আবাসিক হোটেল এবং ফ্লাটবাড়িভিত্তিক যৌনকর্মীদের চিত্রটি নেই। এই ভাগে আরো ২০,০০০ জন থাকা বিচিত্র কিছু নয়। এটি ধরা হলে কলকাতা শহরে মোট যৌনকর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০,০০০ জনে। আমরা অন্য দেশের একটি শহরের হিসেবটি এত নিখুঁতভাবে দেখতে চেষ্টা করছি এ কারণে যে এখানকার যৌনকর্মীদের একটি বড়ো অংশই বাংলাদেশের নারী ও শিশু। রয়টারের একটি সংবাদ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৩০ হাজার মেয়েশিশু আছে কলকাতার বিভিন্ন পতিতালয়ে এবং ১০ হাজার আছে মুম্বাই এবং গোয়ার পতিতালয়ে।10 এসব নারী ও মেয়েশিশুর সবাই বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছেন। এক হিসেবে দেখা যায়, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ২০০,০০০ নারী পাচার হয়েছেন। এছাড়া এসময়ে মোট ৬০০০ মেয়েশিশু পাচার বা অপহৃত হয়েছে কিংবা হারিয়ে গেছে।11 ইন্টার প্রেস সার্ভিস (৮ এপ্রিল ১৯৯৮) সূত্রে জানা যায়, পাচারকৃত এই দু’লক্ষ নারীর সবাই ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে যৌনকাজে ব্যবহৃত হচ্ছেন। একটি বিদেশী সংস্থার বাংলাদেশ সম্পর্কিত কান্ট্রি নেরেটিভ পেপারের ভাষ্য অনুযায়ী, বৈধভাবে যেসব নারী গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করবার জন্য কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদিআরবে যান, প্রায়শ তাঁদেরও অনিচ্ছাকৃত যৌনদাসত্বকে মেনে নিতে হয়। ওই পেপারের মতে, বার্মিজ মেয়েদের পাচারের রুট হিসেবেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে খ্যাতি পেয়েছে।

৭.
রয়টারের তথ্য সঠিক হলে কলকাতায় কর্মরত মোট যৌনকর্মীর সংখ্যা ৪০,০০০ এর বেশি হতে বাধ্য। একটি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে সর্বমোট যৌনকর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি।12 কিন্তু শুধু ঢাকা শহরে কর্মরত মোট যৌনকর্মীর সংখ্যাসূচক কোনো বিশ্বাসযোগ্য হিসেব আমাদের হাতে নেই। জনসংখ্যা, জনঘনত্ব, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং পেশাবৈচিত্র্যে ঢাকা-কলকাতা প্রায় একইরকম। সে বিবেচনায় ঢাকা শহরের বর্তমান মোট যৌনকর্মীর সংখ্যাও কলকাতার সমান ৪০,০০০ জন হতে পারে। যাদের মাথায় এই তর্ক উসকে উঠছে যে, ঢাকা শহরে বর্তমানে একটিও স্বীকৃত যৌনপল্লি নেই, সুতরাং এ সংখ্যা আরো কম হবে– তাদের উদ্দেশ্যে এই তথ্যটি দেয়া যায় যে, ঢাকা শহরে দেহব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মেয়েশিশুর সংখ্যাই ১৫ থেকে ২০ হাজার, যারা এ কাজ শুরু করেছে তাদের বয়স ১২ বছর হবারও আগে থেকে।13 তাদেরকে অনুরোধ করা যায় যে, স্বীকৃত যৌনপল্লি না-থাকায় সারা ঢাকার পার্কে-উদ্যানে-রাস্তার পাশে-বড়ো বড়ো ইমারতের দেয়াল ঘেঁষে, নির্মাণাধীন ভবনের নিচে, নদীতীরে, রেল ও বাস স্টেশনে রাত্রিবেলা শরীর কেনাবেচার কী জমজমাট হাট বসে একটু খবর লাগিয়ে দেখুন! তাছাড়া কজন জানেন জানি না যে হাতেগোনা দুয়েকটি বাদ দিয়ে ঢাকা শহরের শত শত আবাসিক হোটেলের সবকটিই এখন একেকটি যৌনপল্লি। যৌনপরিষেবা গ্রাহকদের জন্য আবাসিক হোটেল পতিতালয়ের চেয়ে অনেক বেশি সহজগম্য এর গায়ের সঙ্গে পতিতালয় নামটি সাঁটা নেই বলে।14 সে কারণে পতিতালয় ও রাস্তাঘাটের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করেও যৌনপরিষেবা ক্রয়ের জন্য শহরের আবাসিক হোটেলসমূহে ২৪ ঘণ্টা ধরেই কী ভয়ানক চাপ পড়ে তা হঠাৎ হঠাৎ পরিচালিত পুলিশ রেইডে ধরা পড়া যৌনকর্মী ও ক্রেতা-গ্রাহকের সংখ্যার দিকে তাকালেই অনুমান করা যায়। আর ফ্লাটবাড়ির আশ্রয়ে পরিচালিত হওয়া যৌনব্যবসার চিত্রটি আমাদের কাছে আড়ালেই থেকে যায়, থেকে যাচ্ছে, থেকে যাবে। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অভিযোগ না-উঠলে কিংবা ওসব স্পটে কেউ খুন না-হলে সাধারণত সেগুলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং গণমাধ্যমের আড়ালেই থাকে। উল্লেখ্য, এসব স্পটের গ্রাহকরা প্রায়শই হন উচ্চমধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তেরা।

৮.
আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে সমাজই যৌনকর্মীদের এ ধরনের নিকৃষ্ট পেশায় ঠেলে দিয়েছে। দেশের অসম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা একটি অংশকে এমনই মানবেতর পর্যায়ের দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে দেয় যে তাদের পেটের ক্ষুধা মেটাবার আশু দাবির কাছে ভালো একটি কাজ করবার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শিক্ষাটা তাদের আর অর্জন করা হয়ে ওঠে না। এর উপরে আছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী হয়ে জন্মানোর অভিশাপ। শৈশবেই ধর্ষিত হওয়া থেকে শুরু করে বাল্যবিয়ে এবং স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্তা বা অকাল বিধবা হয়ে শিশু বাচ্চা ও নিজের পেটের আগুন নেভাতে অনন্যোপায় হয়ে এ পথে আসা ; কিংবা যৌতুকের দাবি মেটাতে না-পারায় বিয়েই না-হওয়া এবং প্রেমিকের বেশে আসা কোনো প্রতারকের হাত ধরে বাড়ির বাইরে এসে সাক্ষাৎ নরকে পতিত হওয়া ; কিংবা নিয়মিত উপোসের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে কাজের সন্ধানে শহরমুখী হওয়া এবং ভালো কাজের প্রলোভনে পাচারকারীর পাল্লায় পড়ে ভেড়ার পালের একজন হয়ে বিদেশে বিক্রি হয়ে যাওয়া– এরকমই একেকটি নেপথ্য কাহিনি দিনের পর দিন বয়ে চলছে রেড লাইড এরিয়ার সকল সদস্যনারী।

ইন্টারন্যাশনাল এইডস সোসাইটির ১৫তম আন্তর্জাতিক এইডস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ১১-১৬ জুলাই ২০০৪-এ থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। ওই কনফারেন্সে ঢাকা শহরের হোটেলে দেহব্যবসা করে এমন ১৫০ জন যৌনকর্মীর ওপরে পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, এঁদের ৩৩ শতাংশ অন্যদের দ্বারা ভুলপথে পরিচালিত হয়ে এ পেশায় এসেছেন, ১৩ শতাংশ এসেছেন আরো ভালো জীবনযাপন করবার আশায় এবং ১০ শতাংশ প্রেমিকের দ্বারা ধর্ষিত ও প্রতারিত হয়ে।15 ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’ কলকাতায় আয়োজিত যৌনকর্মীদের প্রথম জাতীয় সম্মেলনে ‘এ-লড়াই আমাদের জিততেই হবে’ নামে যে জবানবন্দি দেয় তাতে মেয়েদের যৌন ব্যবসায় আসার কারণ জানাতে তাঁরা বলেন, ‘অন্য আর পাঁচটা পেশায় মানুষ যে কারণে যায়, সে-ভাবেই যৌন ব্যবসায় অধিকাংশ মেয়েই আসে পেটের তাড়নায়। যে বিহারী মজুর কলকাতায় রিকশা চালায় অথবা যে বাঙালী শ্রমিক বম্বেতে মিলে ঠিকা কাজ করে আমাদের গল্প তার থেকে আলাদা নয়। কেউ কেউ বিক্রি হয়ে চলে আসে। বেশ কিছু বছর মালকিনের দাসী হয়ে শ্রম বিক্রি করে ধীরে ধীরে ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছুটা স্বাধীনতা পায়। আবার বেশ কিছু মেয়ে জীবনের নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এখানে এসে পৌঁছায়– অনেক সময় পুরোপুরি সব না-জেনে, পুরোপুরি নিজের ইচ্ছেতে নয়।’16 অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, ৪৯.১০ শতাংশ যৌনকর্মী এ পেশায় এসেছেন সীমাহীন দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে, ২১.৫৬ শতাংশ এসেছেন পারিবারিক ডামাডোলের শিকার হয়ে, ১৫.৫৬ শতাংশ অন্য জীবিকার মিথ্যা আশার হাতছানিতে, ৮.৬৭ শতাংশ জেনেশুনে স্বেচ্ছায় এসেছেন এবং বলপূর্বক ধরে এনে এ ব্যবসায় লাগানো হয়েছে ০.৪৪ শতাংশকে। যারা মনে করেন যৌনকর্মীরা কেবল বংশপরম্পরায়ই এ পেশায় আসে, তাদের জন্য এই তথ্যটি দেয়া যায় যে কলকাতার মোট যৌনকর্মীর মধ্যে সে হার মাত্র ৪.৬৭ শতাংশ।17 উল্লিখিত চিত্রে যৌনকর্মীদের এ পেশায় আসার কারণ জানা গেল। পাশাপাশি কৌতূহলী পাঠকদের জন্য এখানে আরেকটি চিত্র তুলে ধরা যায়, যে-চিত্রটি ধারণা দেবে যে এদের এ পেশায় আসার মাধ্যম কারা। এসব যৌনকর্মীর ৬০.৬৭ শতাংশই এ পেশায় এসেছেন বন্ধু ও প্রেমিকের প্রতারণার শিকার হওয়ার মাধ্যমে, ৭.১১ শতাংশ দালালদের মাধ্যমে, ৭.৩৩ শতাংশ দালালদের দ্বারা বিক্রিত হয়ে, ৪ শতাংশ আত্মীয়দের মাধ্যমে, ২.২২ শতাংশ আত্মীয়দের দ্বারা বিক্রিত হয়ে এবং নিরুপায় হয়ে নিজেরাই এ পেশায় আত্মসমর্পণ করেছে ১৮.৬৭ শতাংশ।18

৯.
সত্য যে, এই বিপুল পরিমাণ যৌনকর্মীর অধিকাংশই যৌনদাসত্বের ফাঁদে আটকে গেছেন এবং এ জীবন থেকে তাঁরা যেকোনো মূল্যে ছুটি চান। কিন্তু ছুটি-পরবর্তী জীবনে সম্মানের সাথে টিকে থাকবার নিশ্চয়তা তাঁদের কেউই দেয় না। এমনকি সরকারও না। ‘সমাজের বিষ ধারণ করে নীলকণ্ঠ হয়ে যাওয়া মানবিকতার পূজারী’ হিসেবে তত্ত্বীয়ভাবে উচ্চস্থান যৌনকর্মীদের জন্য বরাদ্দ করা হলেও আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি সমাজ এঁদের খুবই খারাপ চোখে দেখে। সমাজের ৯৯ শতাংশ মানুষই এঁদের অস্পৃশ্য জ্ঞান করে। মরলে এঁদের সৎকারে পর্যন্ত সামাজিকভাবে বাধা দেয়া হয়। আমরা দেখেছি কার্যকর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না-করেই ঢাকার ইংলিশ রোড ও নারায়ণগঞ্জের টানবাজারের পতিতাপল্লি ধ্বংস করে দেয়ায় উচ্ছেদ হওয়া যৌনকর্মীদের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়তে। এঁদের একটা অংশ দেশের অন্যান্য পতিতালয়ে জায়গা নিয়েছেন, একটা অংশ শহরের বিভিন্ন হোটেলে ও বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ব্যবসা করছেন আর বাদবাকি সবারই পথবেশ্যার মানবেতর জীবন বেছে নিতে হয়েছে। পুনর্বাসনের নামে তখন সরকার যেসব খেলা দেখিয়েছিল তাতে সকলেই বুঝেছে যে পুনর্বাসন শব্দটি ব্যবহার করে সরকার যৌনকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণাটিই করেছিল মাত্র। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার পৌর-কর্তৃপক্ষ ১৯৯২-এ শহরের যৌন বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভেঙে দেয়ার পরও একইভাবে সেখানকার যৌনকর্মীরা সারা শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল। এরপর থেকে ওদেশে বিভিন্ন ধরনের যৌনরোগ ও এইচআইভির সংক্রমণ অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছিল বলে জানা যায়।

অর্থশাস্ত্র মতে, বাজারে যদি কোনো পণ্যের চাহিদা থাকে তাহলে সে পণ্যের উৎপাদন রহিত করা যায় না। প্রকাশ্যে না-হলেও গোপনে তার উৎপাদন চলতেই থাকে। সমাজে যৌনকর্মী তৈরি হবার যেসব কারণ বিদ্যমান, সেগুলোকে অপনোদন করা না-গেলে এবং যৌনপণ্যের বাজারচাহিদা কমানো না-গেলে চিহ্নিত রেড লাইড এরিয়াগুলোকে দুমড়ে-মুচড়ে দিলেও অন্য কোনো ছদ্মআবরণে এ ব্যবসা চলতেই থাকবে। তাতে মাত্র একদল যাবে, একদল আসবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।

এ গেল যৌনবাণিজ্যের এক দিক। বিশ্বায়নের ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে যৌনবাণিজ্যের আরো নানা রূপচেহারা স্পষ্ট হয়েছে। তার বড়ো ক্ষেত্র সেক্সট্যুরিজম এবং পর্নোগ্রাফি। প্রতিদিনই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অপরিণত ও পরিণত বয়েসি নারী পাচার হয়ে আন্তর্জাতিক এসব যৌনবাণিজ্যের কবলে পড়ছে। পাচারকারী ও যৌনবাণিজ্যের হর্তাকর্তা শ্রেণির নেটওয়ার্ক এতই বিস্তৃত ও শক্তিশালী যে তাদের শক্তিমত্তার সাথে পেরে ওঠবার চেষ্টা প্রায়ই রাষ্ট্রগুলো করে না, কারণ অনেক রাষ্ট্রের মোটা আয়ই নির্ভর করে এ পেশার ওপরে, বিশেষ করে, সেক্সট্যুরিজম তথা যৌনপর্যটন যেসব রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস।

১০.
উইকিপিডিয়া অনুযায়ী, সেক্স ট্যুরিজম বা যৌনপর্যটন হলো অর্থের বিনিময়ে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে কোনো বিশেষ স্থানে ভ্রমণ করা। জাতিসংঘের বিশেষ অ্যাজেন্সি বিশ্ব পর্যটন সংস্থার মতে, পর্যটন খাত কর্তৃক আয়োজিত অথবা এই খাতের বাইরের কারো আয়োজনে পর্যটন খাতের কাঠামো ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গন্তব্যস্থানের বসবাসস্থলে পর্যটক কর্তৃক বাণিজ্যিকভাবে যৌনসম্পর্ক স্থাপনকেই সেক্স ট্যুরিজম বা যৌনপর্যটন বলে। জাতিসংঘ যৌনপর্যটনকে সমর্থন করে না এ কারণে যে, এর মাধ্যমে পর্যটকের নিজের দেশ ও গন্তব্য দেশ উভয়েরই স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে পর্যটকের নিজের দেশের চেয়ে গন্তব্যদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং পর্যটকের নিজের সাথে ওখানকার মানুষের লৈঙ্গিক-বায়সিক অবস্থার বৈভিন্ন্যই এর জন্য দায়ী। যৌনপর্যটকদের জন্য কখনো কখনো গন্তব্যদেশে স্বল্পমূল্যে যৌনপরিষেবা পাবার আকর্ষণ থাকে। এমনকি সেসব দেশের থাকে যৌনসম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আইনগত শৈথিল্য এবং শিশু যৌনকর্মী পাবার আকর্ষণও।19
যৌনপর্যটনের জন্য পর্যটকদের প্রথম বাছাই দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ব্রাজিল, ডমিনিকান রিপাবলিক, কোস্টারিকা, কিউবা, জার্মানি, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস এবং কম্বোডিয়া। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে যাবার পর রাশিয়া, হাঙ্গেরি, ইউক্রেন, পোলান্ড এবং চেক রিপাবলিকের নামও ওই তালিকায় সংযুক্ত হয়েছে। অবশ্য এসব গন্তব্যের খুব কমসংখ্যক যৌনকর্মীই কেবল যৌনপর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকে। ওসব দেশের মোট যৌনকর্মীর সিংগভাগই স্থানীয় পুরুষকুলের চাহিদা মেটায়। নির্দিষ্ট কোনো দেশের কেবল এক বা একাধিক নির্দিষ্ট স্থানই কেবল যৌনপর্যটকদের গন্তব্য হয়। যেমন নেদারল্যান্ডের আমস্টারডাম, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, পাট্টায়া ও পুকেট। আমেরিকায় যেহেতু নেভাদা ছাড়া অন্য সব এলাকায় পতিতাবৃত্তি অবৈধ, তাই ওখানকার স্থানীয়রা নেভাদায় যৌনপর্যটনে যায়। এছাড়া অন্যান্য কিছু শহরে স্থানীয় পর্যটকরা বিশেষ আইনগত অনুমোদন নিয়ে যৌনপর্যটনে বেরোয়। জানা মতে, আমেরিকা ছাড়া তালিকার অন্যান্য দেশগুলির বেশির ভাগেই পতিতাবৃত্তি একটি আইনসম্মত কার্যক্রম।20

এসব পর্যটকের অধিকাংশেরই ঝোঁক থাকে শিশুর প্রতি, যদিও অধিকাংশ দেশেই শিশুদের যৌনকাজে ব্যবহার করা আইনসম্মত নয়। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা যৌনপর্যটন ও শিশু যৌনপর্যটনকে আলাদা করে দেখে। সংস্থার মতে, যেসব পর্যটক শিশুদেরকে যৌনকাজে ব্যবহার করে তাঁরা কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড এবং অপশনাল প্রটোকল অন দ্য সেল অব চিলড্রেন, চাইল্ড প্রস্টিটিউশন অ্যান্ড চাইল্ড পর্নোগ্রাফি লংঘন করে। অনেক দেশই ওরস্ট ফর্ম অব চাইল্ড লেবর কনভেনশন, ১৯৯৯-এ স্বাক্ষর করেছে এবং নিজেদের দেশে সেটা বাস্তবায়ন করছে। সিঙ্গাপুরের এরকম কোনো আইন নেই বলে তারা ইতোমধ্যে অনেক নিন্দা অর্জন করেছে। ইন্দোনেশিয়ার বাটামও ওরকম একটি গন্তব্য, যেখানে প্রচুর পরিমাণে কমবয়েসি শিশুকে যৌনকাজে ব্যবহারের জন্যে পাওয়া যায়।

১১.
ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর, ১৯৯৮ ইস্যুতে মুদ্রিত একটি প্রবন্ধে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডের যৌনবাণিজ্যে কী পরিমাণ অর্থাগম ঘটে তার কিছু পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। ওই প্রবন্ধে স্বীকার করা হয় যে, যৌনখাত একটি অর্থনৈতিক খাত হিসেবে অফিসিয়াল পরিসংখ্যান, উন্নয়ন পরিকল্পনা বা সরকারের বাজেটে এখনো স্বীকৃত নয়। কিন্তু এ খাতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন ঘটে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনখাতে এই চারটি দেশে প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ নারী যুক্ত আছেন তা পেশাটি অনৈতিক ও গোপন হওয়ার কারণে বলা একেবারেই মুশকিল। তবে ধরে নেয়া যায়, দেশসমূহের মোট নারী জনগোষ্ঠীর ০.২৫ থেকে ১.৫ শতাংশ এ পেশায় যুক্ত। ১৯৯৩-’৯৪ এ তৈরি একটি হিসেব অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় যৌনকর্মীর সংখ্যা দেখানো হয় ১৪০,০০০ থেকে ২৩০,০০০ জন। মালয়েশিয়ায় এই সংখ্যা ৪৩,০০০ থেকে ১৪২,০০০ জন, তবে আইএলওর মতে সে সংখ্যা আরো বেশি। ফিলিপাইনে যৌনকর্মীর সংখ্যা জানানো হয় ১০০,০০০ থেকে ৬০০,০০০ জন, তবে ৫০০,০০০ হওয়ার ব্যাপারে অনেকেই একমত বলে জানানো হয়। থাইল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৭-এ করা জরিপ অনুযায়ী যৌনকর্মীর সংখ্যা দেখানো হয় ৬৫,০০০, কিন্তু আনঅফিসিয়াল সূত্র দাবি করে এ সংখ্যা ২০০,০০০ থেকে ৩০০,০০০ জন। এর বাইরে থাই এবং ফিলিপিনো আরো ১০ হাজার নারী, শিশু এবং হিজড়া যৌনকর্মী বিদেশে কর্মরত আছে।

বলা হয়, যৌনতাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিনোদনমূলক স্থাপনা এবং যৌনপর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মালিক, ব্যবস্থাপক, দালাল, সহযোগী, ক্যাশিয়ার, নিরাপত্তারক্ষী এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে আরো কয়েক মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবনধারণ করে থাকে। প্রতিবেদনটি বলছে, এই চারটি দেশের জিডিপির ২ থেকে ১৪ শতাংশই আসে যৌনখাত থেকে। সরকারি কর্তৃপক্ষ বৈধ-অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ করও আদায় করে থাকে সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো থেকে। থাইল্যান্ডের শহরে যৌনকর্মে রত গ্রামীণ নারীরা বছরে তাঁদের উপার্জন থেকে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার গ্রামে তাঁদের পরিবারের কাছে পাঠান। ১৯৯৩-’৯৪ মেয়াদে দেশগুলো যৌনকর্ম বাবদ বছরে ২২.৫ থেকে ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে।

এই চারটি দেশে পরিচালিত জরিপ তথ্য সাক্ষ্য দেয় যে, নিরক্ষর ও অদক্ষ মেয়েদের পক্ষে যেসব কাজ করা সম্ভব তার মধ্যে যৌনকর্মই সবচেয়ে বেশি অর্থাগম ঘটায়। যেমন মালয়েশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে কাজ করে ১৯৯০-এ একজন দক্ষশ্রমিক বছরে উপার্জন করত ২৮৫২ আমেরিকান ডলার এবং অদক্ষ করত ১৭১১ ডলার। বিপরীতে সে সময়ের হিসেবে কোনো নিম্নমানের হোটেলে যৌনপরিষেবা দিয়ে একজন যৌনকর্মী সপ্তাহে মাত্র একদিন বারো ঘণ্টা কাজ করেই বছরে আয় করতে পারত ২০৮০ ডলার।21

১২.
ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে হওয়া সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় আফ্রিকার দরিদ্র দেশ কেনিয়ায় শিশু পতিতাবৃত্তির এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশটির উপকূলীয় এলাকায় যৌনপর্যটন চালু থাকায় সেখানকার অজস্র শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার মেয়েশিশু দেশটির মালিন্দি, মোম্বাসা, কালিফি এবং দিয়ানি উপকূলীয় এলাকায় বাস করে, যারা মাঝে মাঝেই অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্ম করে। এছাড়াও ২ থেকে ৩ হাজার শিশু ছেলেমেয়ে অর্থের বিনিময়ে সার্বক্ষণিক যৌনপরিষেবা দিয়ে থাকে। উপকূলীয় যৌনপেশায় কর্মরতদের ৪৫ শতাংশই আসে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে, যারা পূর্বেই এ কাজে হাতেখড়ি নিয়ে নেয়। অধিকাংশই আগে নিজেদের এলাকার বারে এ কাজে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়, সাজুগুজু করার জিনিসপাতি ও চুলের স্টাইল আধুনিকায়ন করবার জন্য অর্থ উপার্জন করে তারপর পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য আসে। এখানে শিশুদের মধ্যে যৌনকর্মের প্রাদুর্ভাব এমনই বেড়ে গেছে যে, প্রতি দশজন শিশুর একজন এ কাজে যুক্ত হয় তাদের বয়স বারোয় পৌঁছার আগেই। চরম দারিদ্র্যের কারণে কেনিয়ায় এখন এটি সামাজিকভাবেও অনেকাংশে স্বীকৃতি পাচ্ছে। শিশুদের একটা অংশ সাধারণত সেসব পরিবার থেকে আসে যেসব পরিবারে উপাজনক্ষম কেউ নেই, অথবা কম উপার্জন করে কিংবা সেসব শিশু যাদের বাবা মা উভয়েই প্রয়াত হয়েছেন। তবে আগতদের ৫০ শতাংশের মা-বাবাই কর্মজীবী এবং তারা স্কুলেও যায়, তবে তারা চায় হাতখরচের জন্য বাড়তি কিছু টাকা। অবশ্য এরা সতর্ক থাকে যাতে সমাজের বয়েসি কেউ বিষয়টি টের না-পেয়ে যায়। সূত্র জানায়, কেনিয়ার সৈকতে শিশু যৌনপর্যটনে আগতদের ১৮ শতাংশ ইতালিয়ান, ১৪ শতাংশ জার্মান এবং ১২ শতাংশ সুইস। এরপরেই আছেন উগান্ডান, তাঞ্জানিয়ান, ব্রিটিশ এবং সৌদি আরবীয়রা। তবে দেশের ভিতরেও এই শিশুদের গ্রাহক প্রচুর। পর্যটকদের আগমন যে সময়ে কম হয় বা একেবারেই হয় না, তখনো এই শিশুরা একেবারে কর্মহীন থাকে না।22

১৩.
যৌনপর্যটন ও শিশু যৌনপর্যটনের এই ভয়াবহতার পাশাপাশি নারী ও শিশুদেহের বাণিজ্যিক ব্যবহারের আরেক ভয়াবহ রূপ পর্নোগ্রাফি। এর চর্চা আধুনিক প্রযুক্তির হাত ধরে গোটা পৃথিবীব্যাপী মহামারীর রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ খাতটিরও অর্থনৈতিক বাজার অনেক বড়ো, অর্থাৎ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। বিশ্বখ্যাত নারীবাদী নেত্রী ও আইনজীবী ক্যাথরিন ম্যাককিননের মতে, পর্নোগ্রাফি শিল্প হিসেবে হলিউডের চেয়ে অনেক বড়ো। স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যার দ্রুত বিস্তার ঘটেছে।

বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফির উৎপাদন হার ব্যাপক নয়, তবে এর ভোক্তার পরিমাণ অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে কম নয়। প্রতিদিনই চোরাইপথে হাজার হাজার পর্নো সিডি-ডিভিডি, পত্রিকা দেশের ভিতরে ঢুকছে এবং পৌঁছবার পরে সেগুলো থেকে পুনরুৎপাদন হচ্ছে হাজার হাজার কপি। পুনরুৎপাদিত এসব সিডি-ডিভিডি প্রতিনিই পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন বয়েসি মানুষের কাছে ঘরে ঘরে। পর্নো সিডি-ডিভিডির দর্শকদের মধ্যে নারীরাও আছেন, তবে তার হার খুবই কম। এসবের প্রধান সমঝদার মূলত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-যুবক ও কর্মজীবী পৌঢ়রা। সরকার চাইলে এর আমদানি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব। কিন্তু দেশের ভেতরে ইতোমধ্যেই যে পরিমাণ পর্নো পৌঁছে গেছে, তা দিয়ে আরো পঞ্চাশ বছর রীতিমতো ব্যবসা করে যেতে পারবে এর সঙ্গে যুক্তরা। তাছাড়া বাইরে থেকে আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিলেও দেশের ভেতরে পর্নোগ্রাফির প্রবেশ আর কিছুতেই রোধ করা যাবে না। কারণ এখন ঘরে ঘরেই স্যাটেলাইট টিভি ও ইন্টারনেট কানেকশন। সুতরাং পর্নোগ্রাফির স্বাদ নিতে চাইলে যে গ্রাহকদের সবসময় বাইরে থেকে পর্নো সিডি-ডিভিডি-পত্রিকা কিনতেই হবে, তার কোনো মানেই আর অবশিষ্ট নেই। উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরে ঘরে ইন্টারনেট কানেকশন এখন আর বিস্ময়কর কিছু না। চাইলেই তারা সেক্স সাইট ব্রাউজ করতে পারছে, ডাউনলোড করে নিতে পারছে যেকোনো পরিমাণ পর্নো ফুটেজ। যাদের ঘরে সে সুবিধে নেই তাদের জন্য রয়েছে অলিতেগলিতে গজিয়ে ওঠা সাইবার ক্যাফে। এক ঘণ্টা ব্রাউজ করবার জন্য ক্যাফেগুলোতে চার্জ নেয়া হয় মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং এর বিনিময়ে একটিমাত্র ক্লিকেই পৌঁছে যাওয়া যায় যৌনতার নরকে। কেউ তা দেখবার-বলবার নেই সেখানে। ব্রাউজারদের জন্য সবরকম আড়ালেরই সেখানে বন্দোবস্ত করা আছে। সুতরাং এ নিয়ে আমাদের বিশেষভাবে ভাবিত হবার আছে। কারণ এটা একটা প্রমাণিত সত্য যে পর্নোগ্রাফি ধর্ষণকে ইন্ধন দেয়। কীভাবে ? তার জবাব ম্যাককিনন দিয়েছেন এভাবে যে, পর্নোগ্রাফি সাধারণ মানুষকে ধর্ষণের মিথকে বিশ্বাস করতে সাহায্য করে। যদি কোনো নারী বলেন, তিনি যৌনসম্পর্কের সময় সম্মতি দেন নি তাহলে মানুষের কল্পলোকে পর্নোগ্রাফি ধর্ষণের মিথ হিসেবে কাজ করে। তারা মনে করে মুখে যাই বলুক না কেন মেয়েটি আসলে সম্মত ছিল। এ বিবেচনায় মেয়েটি ‘না’ বললেও ধরে নেয়া হয় সে ‘হ্যাঁ’ বলেছে। এ ধরনের মিথ নারীর বিরুদ্ধে পুরুষকে আরো আগ্রাসী হতে সাহায্য করে। পুরুষকে পর্নোগ্রাফির গ্রাহক হয়ে উঠতে সাহায্য করে।23

তথ্যসূত্র

1. ‘নারীপণ্য’: মুজিব মেহদী, জেন্ডারকোষ (১ম খণ্ড), সেলিনা হোসেন ও মাসুদুজ্জামান সম্পাদিত, মাওলা ব্রাদার্স ২০০৬
2. বিশ্বায়ন : অমীমাংসিত কিছু প্রশ্ন, কাভালজিৎ সিং (মনোয়ার মোস্তফা অনূদিত), বিএনপিএস ও ইউপিএল, ২০০৫]
3. কৌটিল্য : প্রেম ও নৈতিকতা, ড. প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র, নবপত্র প্রকাশন, কলকাতা, ২০০০
4. প্রাগুক্ত
5. প্রাগুক্ত
6. বাংলা ইলেক্ট্রনিক বাইবেল, যোহন, ৮ম অধ্যায়, বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি, ২০০৫
7. বাৎসায়ন-প্রণীত কামসূত্র, পঞ্চানন তর্করত্ন ও মানবেন্দু বন্দোপাধ্যায়, সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার, কলকাতা, পরিবর্দ্ধিত সংস্করণ, ১৩৯৮
8. কৌটিল্য : প্রেম ও নৈতিকতা, প্রাগুক্ত
9. দেবাশিস বসু, ‘কলকাতার যৌনপল্লী’, সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত ধ্রুবপদ, বার্ষিক সংকলন ৫, কৃষ্ণনগর, কলকাতা, ২০০১
10. Trafficking Watch Bangladesh, “Human Smuggling from Banglsdesh at alarming level,” Reuters, 26 may 1997
11. Center for Women and Children’s Study report, Zahiduzzaman Faruque, “Women, children trafficking in Bangladesh,” Kyodo, 5 May 1998
12. ”Trafficking and Prostitution in Bangladesh - Contradictions in Law and Practice”, Sigma Huda, The Coalition Against Trafficking in Women, February 1999
13. BNWLA survey, police estimates, Fawzia Karim Firoze & Salma Ali of the Bangladesh National Women Lawyers’ Association,” Bangladesh Country Paper: Law and Legislation”
14. Khairun Nessa, Shama-A Waris, Zafar Sultan, Shirajum Monira, Maqsud Hossain, Shamsun Nahar, Habibur Rahman, Mahbub Alam, Pam Baatsen, and Motiur Rahman : Epidemiology and Etiology of Sexually Transmitted Infection among Hotel-Based Sex Workers in Dhaka, Bangladesh, International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh, Family Health International, and SRISTI, Khilgaon, Dhaka, Bangladesh, JOURNAL OF CLINICAL MICROBIOLOGY, Feb. 2004, p. 618–62
15. AEGiS-15IAC Factors leading to Hotel based sex work in Bangladesh
16. সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত ধ্রুবপদ, প্রাগুক্ত
17. দেবাশিস বসু, প্রাগুক্ত
18. দেবাশিস বসু, প্রাগুক্ত
19. http://en.wikipedia.org/wiki/Sex_tourism
20. http://en.wikipedia.org/wiki/Sex_tourism
21. Sex as a sector: Economic incentives and hardships fuel growth, The Sex Sector: The economic and social bases of prostitution in Southeast Asia edited by Lin Lean Lim, International Labour Office, Geneva, 1998.
22. Extent and Effect of Sex Tourism and Sexual Exploitation of Children on the Kenyan Coast, UNICEF, EMBARGOED, 19 DEC.2006, KENYA
23. ‘আর উওমেন হিউম্যান ?’, ফাহমিদা আখতার, রোকেয়া কবীর সম্পাদিত নারী ও প্রগতি, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, জুলাই-ডিসেম্বর ২০০৫।

2 comments:

Unknown said...

Bibal er golper sutrer shathe fotua dankari Alem ek kora bukami othoba ghanhin montobbo ek noi.

মুজিব মেহদী said...

আপনার সাথে আমি ঠিক একমত হতে পারলাম না। আমি এখানে বাইবেল যুগের অধ্যাপক ও ফরিশীদের সাথে এখনকার ফতোয়াবাজদের স্পষ্ট মিল দেখতে পাচ্ছি। তো, উপলব্ধ মিলটার উপস্থাপন কেন বোকামি বা অজ্ঞানতার পরিচায়ক হবে তা তো বোঝা গেল না।

একটু ব্যাখ্যা করবেন প্লিজ!

ভাষাবস্তু অবয়বে ধরে রাখে ভাষাচিন্তারেখা

ধর্মতত্ত্ব, বিবর্তনতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে অত্যল্প জানাশোনা আমাকে এরকম একটা গড় ধারণা দেয় যে, মানবপ্রজাতি আদিতে এক গোষ্ঠীভুক্ত ছিল। বি...