Friday, July 3, 2020

সবকিছু অবলীলায় সামলে ওঠার জাদুকর

‘ক্রমশ নিভে আসছে আলো...’

এটা রীতিমতো বিস্ময়কর যে, গুম-হত্যা-দুর্ঘটনার আধিক্য ছাড়িয়ে ভেজাল খাদ্যের রমরমা সময়ে পারিবারিক-সামাজিক-রাজনৈতিক নানা উদ্বিগ্নতা সয়ে মানসম্পন্ন চিকিৎসার অপ্রতুলতার মধ্যেও প্রতি বছর বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। বিষয়টা ভাবতে গেলেই মার্ক টুয়েনের বিখ্যাত এই উক্তিটি মনে পড়ে যে, পৃথিবীতে ‘তিন রকমের মিথ্যা আছে : মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা এবং পরিসংখ্যান’। এতদপ্রেক্ষিতে, নিয়ম করে আয়ু বাড়াটা, আমার মনে হয়, রাজনৈতিক পরিসংখ্যানের কারসাজি হলেও হতে পারে। শামীমুল হক শামীম (শাহশা) বিষয়ক ধান ভানতে গিয়ে পরিসংখ্যানবিষয়ক শীবের গীতটি আমি এ সত্যটি সামনে আনার অভিপ্রায়ে গেয়ে উঠলাম যে, তিনি তাঁর জীবৎকালের গুরুভাগ ইতোমধ্যে যাপন করে ফেলেছেন, মানে ৫০ অতিক্রান্ত হয়ে গেছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-নির্ধারিত পুরুষ মানুষের ২০১৬ সালের গড় আয়ু অনুযায়ী গড়পরতা তাঁর আর মাত্র ২০ বছর ৩ মাস বেঁচে থাকবার বাকি! দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি নারী নন; নারী হলে কথিত পরিসংখ্যানফল তাঁকে আরো ২ বছর ৬ মাস বেশি বাঁচবার প্রতিশ্রুতি দিত!

উল্লেখযোগ্য কিছু করে হইচই ফেলে দেবার জন্য ২০ বছর ৩ মাস সময়টা খুব কম কিছু না হলেও বাঁচবার জন্য সময়টা অল্পই। যা পঞ্চাশে হয় নি তা বাকি বিশে হয়ে যাবে এরকম আশা করায় কোনো দোষ নেই, কিন্তু সে আশা নিরাশায় পর্যবসিত হবার সম্ভাবনাও সমানে সমান। সুতরাং তাঁর মূল্যায়নের জন্য ভবিষ্যৎ বিশের দিকে না তাকিয়ে অতীত পঞ্চাশের দিকে তাকানোই সংগত বোধ হয়।
   
‘তোমাদের আলোকিত করে আমি থাকি অন্ধকারে’ 

শাহশা কবিতা লিখেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালেই তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কবিতা লেখার পাশাপাশি তখন থেকেই প্রগতিমনস্ক সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে তাঁর যুক্ততার কথা জানা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়-পরবর্তী জীবনে ঘটনাক্রমে কবিতা লিখবার তুলনায় তাঁর সাংগঠনিক তৎপরতাই প্রধান হয়ে ওঠে। অনিকেত শামীম (অশা) নামে বাংলা ভাষাভাষীদের পত্রিকা ‘লোক’ সম্পাদনা এবং লোকসংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে মগ্নতার ফলে ক্রমশ ম্লান হতে থাকে তাঁর সৃজনমূলক তৎপরতা। আর এর বিপরীতে ক্রমে বড়ো হতে থাকে কবি-লেখক-সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে তাঁর সমবায়ী কায়কারবার।

এ যাবৎ লোক-এর ২০টিরও বেশি সংখ্যা প্রকাশ ছাড়াও ২০০৯ সাল থেকে পত্রিকাটির পক্ষ থেকে লোক সাহিত্য সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে, ২০১৬ পর্যন্ত যার প্রাপক হয়েছেন ৯ জন বাংলাদেশি কবি-সাহিত্যিক। দর্শনীর বিনিময়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দশকের কবিদের অংশগ্রহণে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান ‘ধ্রুপদী কবিতার উত্তরাধিকার’, ‘বৃষ্টিদিনে কাব্যকথা’, ‘বৃষ্টি ও বিরহের কবিতা’, ‘শীতের কবিতা’ এবং বিভিন্ন দশকের কবিদের নিয়ে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান ‘বিরুদ্ধ স্রোতে আমি একা’ (প্রথম দশক), ‘রোদ মেলেছে উড়াল ডানা’ (দ্বিতীয় দশক) প্রভৃতির সফল আয়োজন সম্পন্ন করেছেন তিনি। এ ছাড়াও, কবিতা ও কথাসাহিত্য নিয়ে সেমিনার, প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, বক্তৃতা অনুষ্ঠান ও নানা বৈঠকীর আয়োজনও লোক-এর পক্ষে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজ। জাতীয় লিটল ম্যাগাজিন মেলার পাঁচ-পাঁচটি আয়োজনের অন্যতম আয়োজক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুকে ঘিরে একাধিক বুলেটিনের প্রকাশক এবং মানববন্ধন-মিছিল-সমাবেশের আয়োজক হিসেবেও তাঁর নাম উচ্চার্য।

এসব কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ ও বাইরের বাংলা কবিতাপাঠকের মধ্যে তাঁর যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, সেখানে তাঁর শাহশা নামক কবি পরিচয়ের খ্যাতি ছাপিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেছে অশা নামক সংগঠক পরিচয়।

‘বৃত্ত আঁকতে আঁকতে তোমাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে মহাবৃত্ত’

এটা বেদনাকর যে, সাহিত্য-সাংস্কৃতিক এতসব কায়কায়বার সত্ত্বেও সাহিত্যমহলে তাঁকে ঘিরে বিশেষায়িত কোনো মুগ্ধতার খবর প্রকাশ্য নয়। তবে কি দীর্ঘদিন ধরে শ্রম-ঘাম-অর্থ-প্রেম বিনিয়োগ করে শাহশা উরফে অশা নানা মাপ ও আয়তনের যেসব বৃত্ত এঁকেছেন, সেগুলো মিলে কোথাও কোনো মহাবৃত্ত তৈরি হয় নি? যতদূর খোঁজ রাখা গেছে, সাহিত্যাঙ্গনে তিনি তাঁর ব্যাপকসংখ্যক নিন্দুক তৈরি হওয়াকে প্রভাবিত ও প্রণোদিত করতে সক্ষম হয়েছেন। যাঁরা তাঁর বন্ধু হয়ে উঠতে পারতেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরা তা হয়ে ওঠেন নি। বরং হয়ে উঠেছেন শত্রুপ্রতিম, নিদেনপক্ষে নিন্দুক।

পৃথিবীতে আজকাল মত ও পথের এত বেশি বৈচিত্র্য বিদ্যমান যে, কাজ করেন এমন মানুষমাত্রকেই বিরুদ্ধ মত ও পথের অনুসারীদের মোকাবেলা করে এগোতে হয়। এর থেকে দূরে থাকতে পারেন কেবল নিষ্কর্মা ও বোবারা। লক্ষণীয় যে, তাঁর ক্ষেত্রে এই বিরুদ্ধ বলয়ের শক্তি ও সজ্জা স্বাভাবিকের চাইতে খানিক বেশিই বোধহয়। এরকম কেন হলো তা নিয়ে অন্য পরিসরে বিশ্লেষণ চলতে পারে। তবে এখানে কিছুটা আভাস দিয়ে রাখা যায়। আমার দৃষ্টিতে এর তিনটেমাত্র কারণ :

১. সামাজিক, সাহিত্যিক ও পানশালাসম্পর্কিত পরিচিতির কারণে তাঁর সাথে প্রচুরসংখ্যক মানুষের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সদাপ্রসন্ন ও আমুদে শাহশা উরফে অশা কিছুমাত্রায় লোকজনকে তাঁর দিকে আকর্ষণও করতে পারেন। কিছুদিনের মধ্যে তাঁর কাছে আকর্ষিতজনের নানারকম প্রত্যাশাও হয়ত তৈরি হয়। কিন্তু সংগত কারণেই সবার প্রত্যাশা পূরণ করা একজন ব্যক্তি বা একটি সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব নয়। পারেন নি তা শাহশা উরফে অশা কিংবা ‘লোক’ও। সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পছন্দাপছন্দ থাকে, থাকতে হয়। তা নইলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার বিশেষত্ব হারায়। আর বিশেষত্ব ধরে রাখতে চাইলে উপজাত হিসেবে অমুগ্ধজনের আবির্ভাব ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে এটা ঘটতে থাকলে তাদের পরিসর ক্রমশ বড়ো হয়ে উঠতে উঠতে অমুগ্ধ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তরিত হয়, যদি অমুগ্ধতাকে কনভার্ট করে তাদের মুগ্ধ করবার কোনো প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে ক্রিয়াশীল না থাকে। এটা পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত উপায়েই ঘটে।

২. সামাজিক-রাজনৈতিক-সাহিত্যিক সকল ধরনের কাজেই ভিন্নবলয় থেকে যেহেতু প্রতিনিয়ত ভিন্নমত তৈরি হতে থাকে, সেহেতু উপেক্ষা না করে যথাযথ উপায়ে এসব মতের মোকাবেলা করা জরুরি হয়। কাজভেদে মোকাবেলার ধরনও ভিন্ন হয়। তিনি যে ধরনের কাজে যুক্ত, সে কর্মসংশ্লিষ্ট ভিন্নবলয় থেকে উত্থাপিত ভিন্নমতকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মোকাবেলা করা শ্রেয়। কিন্তু তিনি সেটা না করে নীরবতাকেই কৌশল হিসেবে শ্রেয়জ্ঞান করে থাকেন। লক্ষণীয় যে, তাঁর হয়ে এ কাজটি অন্যরাও যে করতে পারতেন না তা নয়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রায় কেউই নিষ্ঠার সাথে তা করতে এগিয়ে আসেন নি। হয়ত তাঁরা এই সংকটকে নিজের সংকট ভাবতে পারেন না। অন্যেরা তাঁর সংকটকে নিজের সংকট ভাববার মতো পরিসর পান কি না বা তিনি তাদের সে পরিসর দেন কি না সেটাও অবশ্য ভেবে দেখবার বিষয়।   

নির্বিরোধ থাকা যে কৌশল হিসেবে অকার্যকর তা নয়, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। তবে এটি কাজ করে অত্যন্ত ধীরগতিতে। ফলে সর্বদাই তাঁর প্রতি প্রীত নয় এমন মানুষের স্রোতকে পরিসরে বড়ো মনে হয়। নিয়মানুযায়ী দীর্ঘ সময় পরে এই বিরুদ্ধ বলয় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বদলে যেতে পারে। সেরকম ভাবা আচরণবিজ্ঞানসম্মতও।  

৩. শাহশা উরফে অশার ব্যক্তিগত জীবনের বেশ কিছু দেয়াল কিছুটা সুবোধ্য ও অনেকটা অবোধ্য কারণে মাঝেমধ্যে ভেঙে পড়বার আওয়াজ শোনা যায়। তাতে গোপনীয়তার গোপনতা ভীষণভাবে লঙ্ঘিত হয়। কথিত নিন্দুক ও শত্রুপ্রতিমদের কাছে যখন এই লিক হওয়া গোপনতা পৌঁছে যায়, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা আরো সশস্ত্র হবার অবকাশ পান। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী তখন অবকাশ পান তাঁর বিরুদ্ধে আরো আরো নতুন মানুষকে বিষিয়ে তুলতে।

‘সব ভালোবাসাই ভালোবাসা নয়’ 

দেখা যায়, সামাজিক-সাহিত্যিক ও অন্যবিধ কারণে যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে আসেন তাঁদের একাংশ তো বটেই, যাঁরা আসেন না, উল্লিখিত ত্রিবিধ কারণে তাঁদের একটা অংশও পরবর্তী সময়ে তাঁর নিন্দুকগোষ্ঠীতে নাম লেখান। তদুপরি তাঁর প্রশ্রয়পুষ্টদের মধ্যকার একাংশকে মাঝেমধ্যে নিদারুণভাবে রূপ বদলে ফেলতে দেখা যায়। এ অংশের ভালোবাসার খাঁটিত্ব নিয়ে ম্যালা সন্দেহের অবকাশ আছে। এটা মুদ্রার এক পিঠ। অন্য পিঠে হয়ত এরকম বলা যায় যে, নিকটে এলে তাঁর প্রতি আকর্ষণটা হয়ত আর ধরে রাখতে পারেন না কেউ কেউ। ফলে সকরুণ নিরুৎসাহের আশপাশে আর কোনো ভালোবাসার স্পেস খুঁজে পান না তাঁরা।

খুব কম মানুষই পূর্বাহ্ণে এটা বুঝতে পারেন যে, পরে কে তার লাঙল-জোয়াল ব্যবহার করে তারই ভিটায় উফশী ঘৃণার আবাদ করবে। বুঝলে কিছুটা অন্তত আত্মরক্ষা করা যায়। অশাও ব্যাপারটা খুব একটা বোঝেন বলে কখনো মনে হয় নি। বুঝলে হয়ত তাঁর ভিটার সবুজ আরো বড়ো পরিসর নিয়ে রং ছড়াতে পারত।

‘বেদনার ক্ষত বুকে নিয়ে কতদূর যাওয়া যায়, বলো?’

এহেন ক্ষতাক্ত দেহমন নিয়েই অশা মাইনপোঁতা পথঘাট মাড়িয়ে জোরকদমে এগিয়ে চলেছেন দেখা যায়। মাঝে মাঝে তাঁকে হতাশ মনে হলেও তা প্রায়ই হয় খুব সাময়িক। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর নেশা কিছু মানুষকে সদাই তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনিও তেমনি একজন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য বাধা, অসহযোগিতা ও নিন্দামন্দকে থোড়াই কেয়ার করে আপাতদৃষ্টে অসাধ্য মনে হওয়া একেকটা উদ্যোগ হাতে নিয়ে তিনি ঠিকই তা সাধন করে ফেলেন। যেন কোনো এক প্রলুব্ধকর দূরাগত ধ্বনি তাঁকে সামনে টেনে নিয়ে যায়।

প্রশ্ন জাগতে পারে, এত সক্ষমতা কোত্থেকে কীভাবে পান অশা? মনে হয়, কোথাও তাঁর একটা বিপুল শক্তির উৎস আছে, অত্যন্ত গোপন, যা তাঁকে ছররা বন্দুক নিয়ে মেশিনগানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হবার সাহস জোগায়। এই রহস্য কাছের কেউ কেউ জানলেও আমরা জানি না।

এরকম একটা কথা সমাজে প্রচলিত আছে যে, যে কাজ যত ভালো, সে কাজের তত বাধা; যে যত শক্তিমান, তার তত শত্রু ও নিন্দুক। এই বাক্যের জানালা দিয়ে তাকালে একভাবে বিষয়টার একটা ব্যাখ্যা মেলে বটে। তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানুষগুলোর দ্বারা তৈরি হওয়া প্রতিবন্ধকতাসমূহ বারেবারে নস্যাৎ হয়ে যাওয়া দেখে তখন এটাকেই সত্য বলে মনে হয় যে, শাহশা উরফে অশার কৃত কাজবাজ মোটের ওপর ভালো এবং তাঁর ধারণ করা সমুদয় শক্তি কেবল অপরাজেয় হতেই জানে।

তখন ‘অভিনন্দন’ বলে বা না বলে বিস্ময়মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া বিরুদ্ধবাদীদের কার্যত আর কিছু বলবার-করবার থাকে না।

‘সবখানেই বাসা বেঁধেছে ফণা তোলা বিষাক্ত সাপ’ 

এসব থাক। নিজের পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতা ও নিন্দুকপরিবৃত অবস্থাকে ভুলে থাকতে অন্যের সম্পর্কে এসব বলাবলি তেমন একটা অর্থ বহন করে না। এমনকি নিজের জীবন তাতে নিষ্কণ্টক ও পুষ্পিতও হয়ে ওঠে না। তাঁর চেয়ে শাহশা উরফে অশার ব্যাপারে এই সত্যটা উচ্চারণ করে রাখা কাজের হতে পারে যে, বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও তার অস্তিত্বের বিপক্ষে যে শক্তি তৎপর, তাদের বিরুদ্ধে তিনি সবিশেষ সক্রিয়। সেটা কবিতায় যেমন তেমনি পথেও। এমনকি ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়িয়ে বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত গোষ্ঠীর ব্যাপারেও তাঁর কণ্ঠ বিশেষভাবে সোচ্চার। তাঁর এ সক্রিয়তাকে, বর্তমান অবিশ্বস্ত সময়ে, প্রায়ই বড়ো প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।

‘অন্ধপাতায় জ্যোৎস্নার বিকিরণ’

শাহশা উরফে অশার যাপন ও ক্রিয়াকলাপে মন পাতলে উপলব্ধি করা যায় যে, বহুত্ববাদী সংস্কৃতিঋদ্ধ এক প্রাকৃত পাঠশালা জাগে তাঁর প্রত্যাশার চূড়ায়, যা অধরাপ্রায়, কাছে থেকেও যা সুদূর বিদেশ। স্বপ্নরূপ ওই অধরাই তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে। ওই ডাকে তিনি হয়ত আরো ম্যালাদিন যথারীতি সাড়া দিয়ে যেতে থাকবেন সেরকম মনে হয়।

কবিতা অনেক রকম। জীবন অনেক রকম। শাহশার কবিতা ও জীবনেরও একটা নিজস্ব রকম আছে। সেই নির্দিষ্ট রকমটি যেন একটি অন্ধপাতায় জ্যোৎস্নার বিকিরণ। তার স্নিগ্ধ ও মৃদু আলো সবাইকে না ছোঁক কাউকে কাউকে নিশ্চিত ছুঁয়েছে, ছোঁয় ও ছোঁবে। এই অবস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শনসহ এই পরিসরে তাঁর সফল একটি দীর্ঘজীবন প্রত্যাশা করা যাক।

দ্রষ্টব্য : এই লেখার উপশিরোনামগুলো শামীমুল হক শামীম (শাহশা)-এর কবিতা থেকে নেওয়া।

জানুয়ারি ২০১৮

No comments:

ভাষাবস্তু অবয়বে ধরে রাখে ভাষাচিন্তারেখা

ধর্মতত্ত্ব, বিবর্তনতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে অত্যল্প জানাশোনা আমাকে এরকম একটা গড় ধারণা দেয় যে, মানবপ্রজাতি আদিতে এক গোষ্ঠীভুক্ত ছিল। বি...